মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে বৃহস্পতিবার শুনানি শুরু করবেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর।
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-২ কামারুজ্জামানের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ খণ্ডন করে আসামিপক্ষের শুনানি শেষ করেছেন। গত রোববার তিনি শুনানি শুরু করেছিলেন।
আব্দুর রাজ্জাক তার শুনানিতে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর আইনি ও ঘটনা ধরে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। তার দাবি, আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে অভিযোগগুলো সুসংহত না হওয়ায় কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সুযোগ নেই।
তিনি আইনি যুক্তি দিতে গিয়ে দাবি করে বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হত্যার যে অভিযোগগুলো তোলা হচ্ছে সেগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। এটা সাধারণ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ হয়ে গেছে।
তিনি একে একে অভিযোগ পড়ে শোনান এবং বলেন, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৩(২)এ ধারায় যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটার বিপরীতে তার অপরাধের যা বর্ণনা করা হয়েছে তা সাংঘর্ষিক। ঘটনার বিবরণীতে মানবতাবিরোধী শব্দটার উচ্চারণসহ কোনো অপরাধই নেই। সেক্ষেত্রে এ অভিযোগ গঠন করার যৌক্তিক হবে না।
একাত্তরের ২৫ জুলাই শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আনা অভিযোগের উল্লেখ করে রাজ্জাক বলেন, ‘বলা হচ্ছে সেই গ্রামে আলবদরের সদস্যরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরুষদের হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করে। গ্রামটিতে গণহত্যা করা হয়েছিল জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামানের পরিকল্পনা ও পরামর্শে। সেদিন একসঙ্গে ১২০ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। ৪০ বছর ধরে গ্রামটি ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত। এতো বড় ঘটনা, কিন্তু কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই, চাক্ষুস সাক্ষীও নেই। একজন আছেন সাক্ষী। কিন্তু তিনিও দেখেননি, শোনা কথা বলছেন। এতো বড় অভিযোগ এভাবে উত্থাপন করা যায় কিনা ট্রাইব্যুনালে সেই প্রশ্ন করেন তিনি।
আলবদর বাহিনী ঢাকায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, কামারুজ্জামান সে সময় শেরপুরে ছিলেন। তিনি কিভাবে এর সঙ্গে জড়িত হবেন- এমন প্রশ্নও উত্থাপন করেন রাজ্জাক।
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের অভিযোগ, কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগ অযৌক্তিক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের আওতায় বিচার্য নয়।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গত ৩১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। ৮৪ পৃষ্ঠার এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগে গণহত্যা, গণহত্যা সংঘটনে ষড়যন্ত্র, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও হত্যা, ব্যাপক নির্যাতনযজ্ঞ, দেশত্যাগে বাধ্য করা, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে ক্রমাগত নির্যাতনের সুপিরিয়র হিসেবে সব অপরাধের একক ও যৌথ দায় সংক্রান্ত ৯টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
৮ মে প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত এ অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান।
অভিযোগে বলা হয়, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে তার পরিকল্পনা ও পরামর্শে ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই ১২০ জন পুরুষকে হত্যা করা হয় এবং ওই গ্রামের প্রায় ১৭০ জন মহিলাকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়।
তিনি বলেন, সেই ঘটনার পর থেকে সোহাগপুর গ্রাম এখন ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত। এ কারণে সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর জন্যও দায়ী কামারুজ্জামান।
উল্লেখ্য, গত ১৬ এপ্রিল প্রসিকিউশনের প্রধান গোলাম আরিফ টিপুর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কামারুজ্জামানের মামলাটি প্রথম ট্রাইব্যুনাল থেকে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।