এই প্রথম এই সৌরমণ্ডলের কোনো চাঁদে দেখা গেল বৃষ্টি। সেটাও আবার গ্রীষ্মকালে। বৃষ্টির আগে কোনো মেঘের চিহ্নমাত্র থাকে না আকাশে। আর সেই বৃষ্টিতে আকাশ থেকে জল নেমে আসে না। নেমে আসে তরল মিথেন। তবে তা আকাশের ঠিক কোথা থেকে নেমে আসছে, কেন নেমে আসছে, জানা যায়নি। পৃথিবীর বৃষ্টির ফোঁটার থেকে অনেক ধীরে ধীরে সেই মিথেন বৃষ্টির ফোঁটা নামে। সম্প্রতি শনি গ্রহের চাঁদ টাইটানে এমন ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করেছে নাসার ‘ক্যাসিনি’ মহাকাশযান।
ক্যাসিনির পাঠানো ছবি ও তথ্য থেকে জানা গেছে, ওই বৃষ্টির পরেই ঠান্ডার মৌসুম চলে গিয়ে পুরোপুরি গরম পড়ে শনির বৃহত্তম চাঁদ টাইটানের উত্তর মেরুতে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে আমেরিকান জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’এ। যার মূল গবেষক ইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ভারতীয় বংশোদ্ভূত রজনী ধিংড়া।
মেঘ ছাড়া সেই বৃষ্টি হচ্ছে কীভাবে টাইটানের উত্তর মেরুতে, তা নিয়ে যথেষ্টই ধন্দে পড়ে গিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কারণ, এই সৌরমণ্ডলের আর কোনো চাঁদেই এর আগে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টি পড়তে দেখা যায়নি। এমনকী, শনির চাঁদ টাইটানের দক্ষিণ মেরুতেও এর আগে যে বৃষ্টি পড়তে দেখা গিয়েছিল, তা কিন্তু গ্রীষ্মকালে হয়নি।
ঝমঝম করে নেমে আসছে গলিত মিথেন! ছবি : নাসা
আনন্দবাজার ডিজিটালের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে ওয়াশিংটন থেকে রজনী বলেছেন, ‘এমন কোনো ক্লাইমেট মডেল নেই, যেখানে বলা আছে, মেঘ ছাড়াও বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির জন্য সব সময়েই মেঘের প্রয়োজন। কিন্তু কেন, কী ভাবে টাইটানের উত্তর মেরুতে গ্রীষ্মকালে কোনো মেঘ ছাড়াই বৃষ্টি হয়, তা এখনও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। এও জানতে পারিনি কেন সেই বৃষ্টি হয় গ্রীষ্মকালে।’
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে শনির চাঁদ টাইটানের বায়ুমণ্ডলের মিল রয়েছে অনেকটাই। পৃথিবীর মতোই টাইটান পাথুরে। পৃথিবীর শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষার মতো নানা ঋতু রয়েছে টাইটানেও। তবে সেগুলির মেয়াদ কিন্তু অনেকটাই। পৃথিবীর কয়েকটা বছর সেখানে একটা ঋতু। পৃথিবীর স্বাভাবিক জল-চক্রের মতো একটা চক্র বা সাইক্লও রয়েছে টাইটানেও। তবে সেটা জলের নয়, মিথেনের মতো তরল হাইড্রোকার্বনের।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পৃথিবীর চেয়ে অনেক কম পরিমাণে বৃষ্টি হয় টাইটানে। টানা ১৩ বছর শনি আর তার চাঁদ টাইটানের উপর নজর রেখেছিল ক্যাসিনি মহাকাশযান। কিন্তু ওই ১৩ বছরে বড়জোর ৭/৮ বার তার নজরে পড়েছিল টাইটানের বৃষ্টি। পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের সাত ভাগের এক ভাগ টাইটানের অভিকর্ষ বল। তাই পৃথিবীর আকাশ থেকে যে গতিতে নেমে আসে বৃষ্টির জলের ধারা, টাইটানে নেমে আসা বৃষ্টির ধারা তার চেয়ে নামে অনেক ধীরে ধীরে। সেই ঘটনাকে দেখতে লাগে আমাদের তুষারপাতের মতো।
তা হলে কি বৃষ্টির আগে কোনো মেঘই হয় না টাইটানে? বিজ্ঞানী রজনী ধিংড়া বলেছেন, ‘সেটা এখনও আমাদের কাছে একটা জটিল রহস্য। আলোর দুই-একটা তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সেই মেঘের মতো একটা কিছুর আভাস পেলেও, সব তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সেই মেঘ দেখা যায়নি। আমাদের আরও অবাক করেছে টাইটানের দক্ষিণ মেরু। সেখানে কিন্তু মেঘ ছাড়া বৃষ্টি হয় না কখনও। তাহলে, কেন উত্তর মেরুতে মেঘ ছাড়া বৃষ্টি হয়, এখনও পরিস্কার নয়।’