সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যে যেকোনো সশস্ত্র সংঘাত রুখে দেয়ার সক্ষমতা প্রমাণে বড় ধরনের সামরিক মহড়া আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদের প্রতি আলোচনায় বসারও আহ্বান জানান তিনি। তবে সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে চলমান বিক্ষোভকে আরো বেগবান করা হবে বলে জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা হুয়ান গুয়াইদো।
এদিকে বিরোধী নেতাকে সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ভেনিজুয়েলাকে ধ্বংস করবে বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জানিয়েছেন গুয়াইদোকে সমর্থন জানানোর জন্য জাতিসংঘকে আহ্বান জানাবেন তিনি।
কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় ২৫ জানুয়ারি, শুক্রবারও রাজধানী কারাকাসের রাস্তায় জড়ো হন কয়েক হাজার বিরোধী। তারা বর্তমান মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। এসময় সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুয়াইদো সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। একইসঙ্গে সরকারের আহ্বান করা সংলাপের দাবিও নাকচ করে দেন তিনি।
বিরোধীদলীয় নেতা হুয়ান গুয়াইদো বলেন, ভেনিজুয়েলার বেশিরভাগ মানুষ এখন সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ অবস্থায় সরকার পদত্যাগ করতে কেন বিলম্ব করছে তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে একটি সমাধান চাই। তবে তা না হলে চলমান আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য ভেনিজুয়েলার প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানাবো। আর এ দেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের বলবো আপনার চলে যাবেন না। যে ব্যক্তি দেশ ছাড়ার জন্য আপনাদের নির্দেশ দিয়েছেন তার এ বিষয়ে কথা বলার এখন আর কোনো অধিকার নেই।
তবে গুয়াইদোর আহ্বান আমলে নেননি ভেনিজুয়েলায় মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত কর্মীরা। দেশ ছাড়ার জন্য প্রেসিডেন্ট মাদুরো ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়ার পরই পরিবারসহ কারাকাস ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। এদিকে ভেনিজুয়েলার সঙ্কট বিষয়ে নীতি নির্ধারণের জন্য ইরাক যুদ্ধের কুশীলব ইলিয়ট আব্রামসকে নিয়োগ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুক্রবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তবে ভেনিজুয়েলা ইস্যুতে ইলিয়টকে নিয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামরিক সঙ্কটে রূপ নেবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এ অবস্থায় ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সতর্ক করে বলেছেন, কোনো ধরনের সশস্ত্র সংঘাত মোকাবেলায় পুরোপুরি প্রস্তুত তার সরকার। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে মাদুরো জানান, নিজের দেশের সক্ষমতা প্রমাণের জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সামরিক মহড়া চালানো হবে। একইসঙ্গে বর্তমান সঙ্কটের জন্য পশ্চিমা সমর্থিত গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করেন তিনি।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। যার দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে ওয়াশিংটন থেকে। প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ক্ষমতায় থাকার সময় এ ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। এই ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য আমি আমার দেশের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাবো। মনে রাখবেন আমাদের দেশের স্বার্থ কখনোই বিদেশিরা রক্ষা করতে পারে না।
এদিকে ভেনিজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডকে ধ্বংসাত্মক হিসেবে উল্লেখ করেছে রাশিয়া। শুক্রবার মরোক্কোর রাজধানী রাবাতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ভেনিজুয়েলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কি নীতি গ্রহণ করেছে তা আমরা জানি। এর আগেও বেশ কয়েকটি দেশকে ধ্বংস করার জন্য ওয়াশিংটন একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা করা হবে।
একইসঙ্গে ভেনিজুয়েলায় ট্রাম্প প্রশাসনের যেকোনো ধরনের সামরিক অভিযানের বিষয়ে সতর্ক করেছেন একাধিক রুশ কর্মকর্তা। এ ধরনের পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তারা।