নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের অধীনে সরকার গঠনে গ্রিসের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার চূড়ান্ত চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে অবশেষে নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশটিতে।
নির্বাচনের নয় দিন পরও কোনো দলের সরকার গঠন করতে না পারা এবং একটি জোট সরকার গঠনে পারস্পরিক সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার কারণে পুনরায় পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন গ্রিসের প্রেসিডেন্ট কারোলোস পাপুলিয়াসের একজন মুখপাত্র।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা মঙ্গলবার তৃতীয় দিনেও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর পরপরই গ্রিসের প্রেসিডেন্টের পক্ষে ঘোষণা করা হয়,‘সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এবং একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’
নতুন নির্বাচনের দিন তারিখ এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও সংবিধান অনুযায়ী এ নির্বাচন আগামী জুনের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে হবে।
এদিকে গ্রিসে বর্তমানে কার্যত কোনো সরকার না থাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত একটি নতুন তত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সরকার বুধবার গঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
নতুন তত্বাবধায়ক সরকারের রুপরেখা প্রণয়নের লক্ষ্যে গ্রিসের প্রেসিডেন্ট কারোলোস পাপুলিয়াস সব রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর ১টায় আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে নতুন নির্বাচন আগামী ১০ থেকে ১৭ জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে গ্রিসের রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে ইইউ একক মুদ্রা ইউরো নতুন করে হোঁচট খেয়েছে। ডলারের বিপরীতে ইউরো ১ দশমিক ২৮ ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২৭ ডলারে। গত ১৮ জানুয়ারির পর এটি হচ্ছে ডলারের বিপরীতে ইউরোর সর্বনিম্ন দর।
এদিকে ইইউ নেতারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন গত মার্চে অনুমোদিত ব্যয় সংকোচন নীতি প্রত্যাখ্যান করলে গ্রিসকে প্রতিশ্রুত সহায়তার বরাদ্দ বন্ধ করে দেবে তারা।
অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি গ্রিস এখন রাষ্ট্রীয় ভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার সম্মুখীন। সঙ্কট না কাটলে নিশ্চিতভাবেই ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো থেকে গ্রিসকে হয়ে যেতে হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে গ্রিসের জনগণ ইইউ প্রস্তাবিত কৃচ্ছ্রতা নীতির প্রতি আস্থাশীল নয় বলেই মনে হচ্ছে সর্বশেষ জনমত জরিপে। ৬ মের নির্বাচনে আশাতীত ফল করা বামপন্থি সিরিজা পার্টি নতুন নির্বাচনেও পার্লামেন্টের বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কৃচ্ছ্রতা বিরোধী অবস্থান নিয়ে ৬ মের নির্বাচনে অংশ নেয় সিরিযা পার্টি। ইতিমধ্যেই তারা ঘোষণা দিয়েছে কৃচ্ছ্রতা নীতি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগের সঙ্গে থাকবে না তারা। তবে সিরিযা পার্টি ইইউয়ের প্রস্তাব নতুন করে বিবেচনার আহবান জানিয়েছে তবে একই সঙ্গে ইউরো জোনের একক মুদ্রা ব্যবস্থায় থাকতে চাওয়ার আগ্রহও ব্যক্ত করেছে তারা।
সাবেক পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় দুই দল সমাজবাদী পাসোক এবং মধ্যপন্থি নিউ ডেমোক্রেসির ভোটে ব্যাংকে ধ্বস নামে ৬ মের নির্বাচনে। পূর্বের পার্লামেন্ট নির্বাচনে দল দুটি একত্রে ভোট পেয়েছিলো ৭৭ শতাংশ অথচ ৬ মের নির্বাচনে তাদের ভোট নেমে আসে ৩৩ শতাংশে।