সংসদের ভিআইপি পদগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে

সংসদের ভিআইপি পদগুলোতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে

মন্ত্রিপরিষদের পর এবার জাতীয় সংসদের ভিআইপি পদগুলোতেও চমক আসছে। স্পিকার পদে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বহাল থাকলেও অন্য পদগুলোতে পরিবর্তন আসছে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে সদ্য গঠিত সরকারে মন্ত্রিপরিষদে জায়গা না পাওয়া আগের সরকারের মন্ত্রীদের আসার সম্ভাবনা বেশি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের ভিআইপিদের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী পদমর্যাদার প্রধান হুইপ ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার হুইপ পদে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এ ক্ষেত্রে স্পিকারের মাধ্যমে সংসদ নেতার দেওয়া তালিকাই (সরকারি দলের সদস্য) অনুমোদন করেন রাষ্ট্রপতি। আর সংসদের অন্য দুই ভিআইপি স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদে সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা সরাসরি ভোট দিয়ে থাকেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী স্পিকার হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হচ্ছেন, এমনটাই আভাস দিয়েছেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

একাধিক সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, স্পিকার পদে পরিবর্তন না এলেও ডেপুটি স্পিকার পদে পরিবর্তন আসছে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ, সাবেক প্রধান হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ ও বর্তমান প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজের এই পদে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বর্তমান ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বহাল থাকতে পারেন বলেও অনেকে জানান।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আ স ম ফিরোজের প্রধান হুইপ পদে থাকার সম্ভাবনা কম। এই পদে সাবেক হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরীর আসার সম্ভাবনা বেশি। এর বাইরে বর্তমান হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার ও ইকবালুর রহিম আলোচনায় আছেন। আর হুইপ পদে ইকবালুর রহিম ছাড়া অন্য কারো থাকার সম্ভাবনা নেই। এই পদের জন্য প্রবীণ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, ইসরাফিল আলম, সিমিন হোসেন রিমি, জুয়েল আরেং ও সাইফুজ্জামান শিখর আলোচনায় আছেন।

তবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া এই সংসদে আওয়ামী লীগের বাইরে থেকেও হুইপ নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মন্ত্রিসভায় না রাখলেও আওয়ামী লীগের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ থেকে হুইপ নিয়োগের প্রস্তাব আলোচনায় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার আসতে পারেন। এ ছাড়া প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও এরই মধ্যে ডেপুটি স্পিকারের পাশাপাশি একটি হুইপের পদ দাবি করেছে। তবে এসব পদে শেষ পর্যন্ত কারা নিয়োগ পাবেন, তা নির্ভর করছে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। চলতি সপ্তাহেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ নেতার প্রস্তাব অনুসারে প্রধান হুইপ ও হুইপ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপর সরকার ও বিরোধী দলের দুই প্রধান হুইপের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদের অধিবেশন কক্ষের আসন বণ্টনসহ অন্যান্য বিষয় চূড়ান্ত করা হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের আগেই এটা সম্পন্ন হচ্ছে।

বর্তমান ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘একাদশ সংসদে একজন সদস্য হিসেবে আছি। এর বাইরে আর কিছুই জানি না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্যদেরই দায়িত্ব দেবেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ৩ জানুয়ারি শপথগ্রহণ শেষে সরকারি দলের সভায় সংসদ নেতা নির্বাচন করা হলেও এখনো সংসদ উপনেতা নির্বাচন হয়নি। দশম সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর পরিবর্তে সেখানে প্রবীণ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও মতিয়া চৌধুরীর মধ্যে একজন আসার সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের মধ্যে একজনকে প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

একাধিক সংসদ সদস্য দাবি করেন, মিনি পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও নতুনত্ব থাকবে। অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানদের অনেকেই এবার মন্ত্রিপরিষদের বাইরে। তাঁদেরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি করার সম্ভাবনা বেশি। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বাইরে শরিক দলের সদস্যরাও সভাপতি পদ পাবেন। এমনকি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একাধিক সদস্য সভাপতি থাকতে পারেন। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো গঠন করা হবে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর