এবার মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন এবং রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজের কম্প্রেসার তৈরির ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে যাচ্ছে ওয়ালটন। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের মধ্যেই দেশে তৈরি ইঞ্জিনেই চলবে ওয়ালটনের মোটরসাইকেল।
ওয়ালটনের তৈরি ইঞ্জিন এবং কম্প্রেসার দেশের অন্যান্য উৎপাদন ও সংযোজনকারীরাও ব্যবহার করতে পারবেন। এমনকি রপ্তানিও সম্ভব।
জানা গেছে, দেশে এখন মোটরসাইকেলের চাহিদা বার্ষিক ৩ লাখ। এরমধ্যে ওয়ালটনের উৎপাদন ক্ষমতাও চাহিদার সমপরিমাণ। ওয়ালটন নিজস্ব কারখানায় মোটরসাইকেল উৎপাদন করলেও ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয় বিদেশ থেকে। যদিও সেসব যন্ত্রাংশ বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং অবকাঠামো উপযোগী করে নেয় ওয়ালটন। কিন্তু আরো বেশি জ্বালানি সাশ্রয়ী, টেকসই এবং বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী করে বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তি দিয়ে ইঞ্জিন তৈরি করতে চায় দেশীয় এই কোম্পানিটি। এতে একদিকে ওয়ালটন মোটরসাইকেলের মান হবে উন্নত, অপরদিকে দামও কমে আসবে।
এ প্রসঙ্গে ওয়ালটনের মার্কেটিং বিভাগের নির্বাহী পরিচালক এমদাদুল হক সরকার বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের মোটরবাইকে জ্বালানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে কিছুটা হলেও জ্বালানি তেলের ওপর চাপ হ্রাস পাবে। তাছাড়া উন্নতমানের কার্বুরেটর সংযোজনের ফলে মাইলেজ পাওয়া যাচ্ছে বেশি।”
তিনি জানান, ইতিমধ্যে ইঞ্জিন এবং কম্প্রেসার তৈরির জন্য ওয়ালটনের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রকৌশলীরা কাজ শুরু করেছেন। নেয়া হচ্ছে উপযুক্ত এবং দক্ষ লোকবলও। অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। গাজীপুরের চন্দ্রায় হচ্ছে নতুন এই ফ্যাক্টরি। এরইমধ্যে দু’টি বহুজাতিক কোম্পানি ফ্রিজ ও এসির কম্প্রেসার ফ্যাক্টরির জন্য জয়েন্ট ভেঞ্চারের প্রস্তাব দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখছে।
ওয়ালটনের কম্প্রেসার কারখানায় প্রাথমিকভাবে বছরে ১০ লাখ কম্প্রেসার তৈরি হবে। যা দেশের চাহিদা মেটাবে। পরে রপ্তানির জন্য উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হবে। ওয়ালটন মোটরবাইকের ইঞ্জিন এবং কম্প্রেসারের এই ফ্যাক্টরি করা হচ্ছে মূলত উন্নত বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য। কারণ ওয়ালটন পণ্য এখন ১৯টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বিশ্বের সেরা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিই উদ্যোক্তাদের প্রধান টার্গেট।
কর্তৃপক্ষ জানায়, ওয়ালটনের ইঞ্জিন হবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। প্রতিটি মোটরসাইকেলের দামও কমে আসবে অন্তত ১০০ ডলার। ফ্রিজের দামও কমে যাবে প্রতিটিতে অন্তত ১০ ডলার।
ওয়ালটনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতে, প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়িত হলে প্রযুক্তিগত উৎর্কষতার দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে জায়গা করে নেবে। পর্যায়ক্রমে এসির কম্প্রেসার এবং মোবাইল ফোন সেট তৈরির দিকে যাবে ওয়ালটন। একইসঙ্গে কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ আইসিটি (ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি) ও অন্যান্য মেশিনারিজ প্রস্তুতের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে তাদের।
ওয়ালটনের সিনিয়র উপ-পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, “এসব সেক্টরে এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। এ বিষয়ে সরকার যদি দীর্ঘমেয়াদী এবং বিনিয়োগ বান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে তাহলে অনেকেই বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। সেইসঙ্গে দেশীয় শিল্প রক্ষায় জাতীয় বাজেটেও থাকতে হতে ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিনিয়োগের সুরক্ষা নিশ্চিত হলেই কেবল ব্যাপক শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, দেশ এগিয়ে যাবে।”