দেশীয় বিলের অতিরিক্ত পুঁটি মাছ শুকিয়ে চ্যাপা শুঁটকি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে নড়াইলে। দেশের বাজার ছাড়িয়ে তা চলে যাচ্ছে ভারতে। এতে একদিকে যেমন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা মাছের দাম পাচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থানও বাড়ছে। স্থানীয় মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়ার ফলে দিন দিন বাড়ছে পুঁটি মাছের শুঁটকি তৈরির খোলা। পাঁচ বছর ধরে এই প্রক্রিয়ায় শলুয়া, মাইজপাড়া, শিংগাসোলপুর, মির্জাপুর, গোবরা, কালনাসহ বিল এলাকায় চলছে দেশি মাছের শুঁটকি তৈরির কাজ।
বিল প্রধান নড়াইলে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫৭টি বিল রয়েছে। এসব বিলে বছরের চার মাস প্রচুর পরিমাণে পুঁটিসহ অন্যান্য ছোট মাছ ধরা পড়ে। সংগৃহীত পুঁটি কয়েক দফা শুকিয়ে বস্তায় ভর্তি করে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সেখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে পানি ও তেল মিশ্রিত চ্যাপা শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। দেশের বাজার ছাড়িয়ে এখন তা যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন স্থানে। আর এ কাজে যুক্ত হয়েছেন নড়াইলের কয়েক হাজার জেলেসহ ব্যবসায়ীরা।
নড়াইল সদরের মাইজপাড়া ইউনিয়নের শলুয়ার বিলে গড়ে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ দেশি পুঁটি মাছের শুঁটকির কারবার। স্থানীয় শুঁটকির কারবারি সূত্রে জানা গেছে, এখানে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে মধ্য ফেব্রুয়ারি এই চার মাসে প্রায় দুই হাজার মণ শুটকি মাছ তৈরি হয়। প্রতিদিন বিভিন্ন বিল-খাল থেকে দেশি পুঁটি এনে রোদে মাচা বা চাতালে শুকানো হচ্ছে। এসব মাছ জেলার বাইরে প্রধানত কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে চ্যাপা শুঁটকি তৈরি করে ভারতের আসাম এবং মেঘালয়ে পাঠানো হচ্ছে। শুঁটকির খরচ কম হওয়ায় প্রতিবছর এ ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। বর্তমানে এখানে প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ শুঁটকি করে কেনাবেচা হচ্ছে। প্রতি মণ শুঁটকি মাছ বর্তমানে ছয় হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে আট হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার মাইজপাড়া এবং শিংগাসোলপুর এই দুটি ইউনিয়নে মোট ছয়টি মাছের খোলা (মাছ শুকানোর লম্বা মাচা) রয়েছে। এখান থেকে মৌসুমে প্রায় আড়াই হাজার মণ শুঁটকি মাছ উৎপাদন হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লার দাউদকান্দি হয়ে ভারতের ত্রিপুরা ও অন্য রাজ্যে চলে যায়। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চ্যাপা শুঁটকি উৎপাদনে করছে।