ডেভিড ওয়ার্নার ও নিকোলাস পুরানের ঝড়ো ফিফটিতে চিটাগং ভাইকিংসকে ১৬৯ রানের টার্গেট দিয়েছিল সিলেট। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে চিটাগাং সংগ্রহ করলো ১৬৩ রান। ফলে শ্বাসরূদ্ধকর ম্যাচে ৫ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ওয়ার্নার বাহিনী।
শেষ ওভারে দারুণ নাটক জমিয়ে তুলেছিলেন চিটাগং ভাইকিংসের দক্ষিণ আফ্রিকান রিক্রুট রবি ফ্রাইলিংক। দুটি ছক্কাসহ তুলে ফেলেছিলেন ১৮ রান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না দলকে জেতাতে।
এবারের আসরে এটিই তাদের প্রথম জয়। প্রথম ম্যাচে ছিলেন উইকেটশূণ্য। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে বল হাতে চেনালেন নিজের জাত। তাসকিন আহমেদের বোলিং আগুনে পুড়ল চিটাগং ভাইকিংস। বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে প্রথম জয় পেল সিলেট-সিক্সার্স।
সিলেট সিক্সার্সের দেয়া ১৬৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় চিটাগং ভাইকিংস। তাসকিন আহমেদের বলে ওয়ার্নারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ শাহজাদ। দ্বিতীয় উইকেটে মোহাম্মদ আশরাফুলকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। অনিন্দ্যসুন্দর খেলছিলেন তারা। তাতে দুরন্ত গতিতে ছুটছিল চিটাগং। তবে হঠাৎই ছন্দ হারান ডেলপোর্ট। সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি। ফেরার আগে ২২ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৮ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন এ ওপেনার।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি আশরাফুল। ২৩ বলে ৩ চারে ব্যক্তিগত ২২ রানে ফেরেন তিনি। খানিক বাদেই অলক কাপালির শিকার হয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম। অধিনায়ক ফিরলে তাৎক্ষণিক পথ হারায় চট্টলার দলটি। এর জের না কাটতেই কাপালির দ্বিতীয় শিকার বনে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন। যা বন্দরনগরীর দলটির জন্য বড়সড় ধাক্কা হয়ে আসে।
সেই বিপর্যয়ের মধ্যে রোবটের মতো চেষ্টা করেন সিকান্দার রাজা। মাঝপথে দুর্দান্ত ব্যাট করেন তিনি। সিলেট বোলারদের ওপর রীতিমতো স্টিম রোলার চালান এ জিম্বাবুইয়ান। তবে ২৮ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৭ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে ফিরলে থেমে যায় চাটগাঁওয়ের দৌড়। পরক্ষণেই তাসকিনের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন নাঈম।
শেষদিকে প্রবল চেষ্টা করেন ফ্রাইলিংক। তাতেও কাজ হয়নি। কেবল হারের ব্যবধানই কমেছে। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটে ১৬৩ রান তুলতে সক্ষম হয় মুশফিকের দল। ২৪ বলে ১ চারের বিপরীতে ৪ ছক্কায় ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ফ্রাইলিংক। অপরপ্রান্তে যোগ্য সমর্থন না পাওয়ায় অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংস খেলেও পরাজিত দলের সদস্য হয়ে থাকেন এ অললাউন্ডার।
বুধবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সিলেট অধিনায়ক ওয়ার্নার। তবে শুরুটা শুভ হয়নি তাদের। সূচনালগ্নেই ঘাড়ে চেপে বসে অশুভ ভূত। অযাচিত শট খেলে আসেন আর যান টপঅর্ডাররা। ইনিংসের শুরুতে রবি ফ্রাইলিংকের বলে ক্যামেরন ডেলপোর্টকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন দাস।
প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে নাঈম হাসানকে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন নাসির হোসেন। ফলে ইনজুরি কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর তার প্রত্যাবর্তনটা সুখের হয়নি। মোসাদ্দেক হোসেনকে ক্যাচ দেয়ার আগে মাত্র ৩ রান করেন মিস্টার ফিনিশার। সেই রেশ না কাটতেই ফ্রাইলিংকের বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬ মাস নিষিদ্ধ হার্ডহিটার সাব্বির রহমান।
৬ রানে টপঅর্ডারের ৩ উইকেট হারালে চাপে পড়ে সিলেট। সেই পরিস্থিতিতে শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন আফিফ হোসেন। প্রথমে ওয়ার্নারের সঙ্গে চাপ কাটিয়ে ওঠেন তিনি। পরে শাসাতে থাকেন প্রতিপক্ষ বোলারদের। দারুণ খেলছিলেন এ তরুণ। তবে হঠাৎই পথচ্যুত হন। খালেদ আহমেদের শর্ট বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে খেলেন ২৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৫ রানের নান্দনিক ইনিংস।
একে একে ফিরে গেলেও একপ্রান্ত আগলে থেকে যান ওয়ার্নার। প্রথমে দেখেশুনে খেললেও সময় গড়ানোর সঙ্গে খোলস ছেড়ে বের হন তিনি। ছোটাতে থাকেন রানের ফোয়ারা। তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন নিকোলাস পুরান।
পথিমধ্যে ফিফটি তুলে নেন ওয়ার্নার। প্রথমবারের মতো খেলতে এসেছেন বিপিএলে। সেই হিসেবে এ টুর্নামেন্টে এটি তার প্রথম ফিফটি। তবে ফিফটির পর খুব বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। ফ্রাইলিংকের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অজি ওপেনার। তিনি থামেন ৪৭ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ব্যক্তিগত ৫৯ রানে।
পরে শুধু চলেছে পুরান শো। ব্যাটকে তলোয়ার বানিয়ে চিটাগং বোলারদের কচুকাটা করে ছাড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৮ রান করে সিলেট। ৫২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন পুরান। ৩২ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় এ ইনিংস সাজান তিনি। অপরপ্রান্তে ২ রানে অপরাজিত থাকেন অলক কাপালি।