গত বছর লিবিয়া অভিযানে ন্যাটোর বিমান হামলায় বেসামরিক লোকজন নিহতের ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তারা বলেছে, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ২০১১ সালে লিবিয়াতে বিমান হামলায় বেসামরিক লিবীয় নিহতের ব্যাপারে দায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে। সম্ভাব্য বেআইনি হামলার ঘটনার কোনো তদন্তও তারা করেনি।
গত বছর লিবীয় নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে ন্যাটো লিবিয়াতে অভিযান চালায়। এ সময় তাদের বিমান হামলায় নিহত লিবিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য নিশ্চিত করে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
‘আনঅ্যাকনোলেজ ডেথস: সিভিলিয়ান ক্যাজুয়ালটিজ ইন ন্যাটো’স এয়ার ক্যাম্পেইন ইন লিবিয়া’ শীর্ষ ৭৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটিতে এইচআরডব্লিউ দাবি করেছে, ২০১১ সালে ন্যাটো লিবিয়াতে ৯ হাজার ৬শ’ ৫৮টি পৃথক বিমান হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় প্রায় ৭২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
অবশ্য লিবিয়াতে ন্যাটোর ভূমিকা নিয়ে প্রথম আপত্তি তোলে রাশিয়া। এর কঠোর সমালোচনা করে জাতিসংঘে তারা ঘটনার তদন্তও দাবি করে। বিমান হামলায় বেসামরিক লোকের মৃত্যুর ঘটনায় ন্যাটোর ক্ষমা চাওয়া উচিৎ এবং সংশ্লিষ্টদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করে রাশিয়া।
গত বুধবার ন্যাটোর ভূমিকা সম্পর্কিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে রাশিয়ার জাতিসংঘ দূত আবারো এ মন্তব্য করেন।
নিহতদের ব্যাপারে ন্যাটোকে দায়িত্ব স্বীকার করতে হবে দাবি করে এইচআরডব্লিউ কর্মকর্তা ফ্রেড আব্রাহাম বলেছেন, ‘আমরা অতি সত্বর একটি স্বচ্ছ ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছি।’
অপরদিকে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম রাখতে সম্ভাব্য সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছিল বলে দাবি করেছে ন্যাটো। বিমান হামলায় নিহত বেসামরিকদের ব্যাপারে কোনো দায়-দায়িত্ব নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা।
গত মার্চে নিহতদের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়ে অপর মানবধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, তাদের কাছে বিমান হামলায় নিহত ৫৫ জনের নামসহ বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ আছে। এদের মধ্যে ১৪ জন নারী ও ১৬টি শিশুও রয়েছে। নিহতদের ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করতে ন্যাটোর ব্যর্থতায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছে অ্যামনেস্টি।
উল্লেখ্য, লিবিয়ায় অভিযান চালানোর আগে অবরুদ্ধ সাধারণ জনগণকে ‘উদ্ধারের’ তথাকথিত প্রচেষ্টার কথা প্রচার করেছে ন্যাটো এবং জাতিসংঘ। কিন্তু অভিযান শেষে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত লিবিয়াতে সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু ন্যাটোর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।