৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ এর বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল দেশবাসী সানন্দে মেনে নিয়ে আগামী পাঁচটি বছরে কী কী উন্নয়ন তারা চান তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। সারাদেশে এ মুহূর্তে আগামী মন্ত্রীপরিষদে কারা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন তা নিয়েও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই।
তবে কয়েকটি বিষয় খুব লক্ষণীয়। সারাদেশে বিরাট স্বস্তি। আওয়ামী লীগের বিজয়ের ফলে নির্বাচন পরবর্তী নৃশংস সহিংসতা নেই। বিএনপি-জামাত জিতলে যে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, দখল, অগ্নিসংযোগ এর কবলে নৌকার ভোটারসহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়তে হয় সেরকম কোনো ভীতি জনমনে নেই। (সুবর্ণচরের একটি গণধর্ষণের ঘটনায় সরকার যে দ্রুততায় আসামীদের গ্রেপ্তার করেছে তা আওয়ামী লীগের সরকারের ওপর মানুষের আস্থা যে সঠিক এবং যুক্তিযুক্ত তা আবারও প্রমাণ করেছে।) বরং দেশে নতুন বছরের শুরুতে একটি উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে। বেশ কয়েকজনের মুখেই শুনেছি একই রকম কথা, আজ দেশটায় এতো স্বস্তি আর আনন্দ উচ্ছ্বাস, কিন্তু ভাবতে পারেন বিএনপি জিতলে দেশটায় এখন কেমন রক্তের বন্যা বইয়ে দিতো?
বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নিশ্চয়ই তাদের এ ভরাডুবির কারণ খুঁজবে, বিচার বিশ্লেষণ করবে পুরো নির্বাচনটিকে। কারণ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে এযাবৎকালের নির্বাচনী ইতিহাসে এটি বিএনপির সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। বর্তমানে দলটি শুধু নির্বাচনী বিপর্যয়েরই শিকার হয়েছে তা নয়, রাজনৈতিকভাবেও দলটির অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে। দলের শীর্ষ নেতা এবং তার পরিবারের দুর্নীতি দু:শাসন শুধু নয়, শীর্ষ নেতার কারাবরণের পর তারই একাধিক মামলায় দণ্ডিত পলাতক আসামী পুত্রকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব অর্পনের মধ্য দিয়ে দলটির দেউলিয়াত্ব এবং দলটি যে একটি পারিবারিক ব্যবসায়িক কোম্পানি হিসেবে পরিচালিত হয়, কোনও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, জনগণের কাছে আজ তা সুস্পষ্ট।
নির্বাচনে ভরাডুবির পর ভরাডুবির কারণ অনুসন্ধান করা যেকোনও রাজনৈতিক দলের জন্য অবশ্যকরণীয়। ভরাডুবির দায় অন্যের ঘাড়ে চাপাবার সস্তা অপচেষ্টা দলের পরিপক্কতার পরিচয় বহন করে না। বিএনপি আপাত: দৃষ্টিতে দেশের বৃহত্তম দুটি দলের একটি হলেও এর জন্ম ইতিহাস, এর গঠনতন্ত্র, পরিচালনা পদ্ধতি এবং নেতৃত্ব, সবকিছুই জন মানুষের রাজনীতির মূল সুরের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। এ অসংগতি দিনদিন স্পষ্টতর হতে হতে এখন দলটির এই নির্বাচনী ভরাডুবির মধ্য দিয়ে পুরোপুরি প্রকাশ পেয়েছে। আমরা যদি এবারের নির্বাচনের বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করি তাহলে কী দেখতে পাই?
রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষকে বুঝতে পারা অন্যতম প্রধান শক্তি। শেখ হাসিনার সরকার ২০১৮-র নির্বাচনে সংবিধানের বাইরে যাবে না এটা তারা নিশ্চয়ই আগে থেকেই বুঝেছিল। তারা নিশ্চয়ই এও জানতেন এবারের নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ দলটিকে টিকিয়ে রাখবার জন্য হলেও অত্যাবশ্যক। তারপরেও তারা নির্বাচনে আসা নিয়ে শেষমুহূর্ত পর্যন্ত টালবাহানা করেছে। ভেতরে ভেতরে নিজেরা প্রস্তুতি নিয়েছে এমন প্রমাণও তারা দিতে পারেনি। এই নির্বাচনে বিএনপির যে দুর্বলতাগুলো জনসম্মুখে স্পষ্ট হয়েছে এবং তাদের ভরাডুবি ঘটিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় তা হলো:
১। মনোনয়ন বাণিজ্য: প্রায় প্রতিটি আসনে দুই বা ততোধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া, প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দেওয়া, ব্যাপক অর্থ লেনদেনের প্রকাশ্য আলোচনা, মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের নিলাম বাণিজ্য, দলের ভেতরের ক্ষোভের বহির্প্রকাশ চেয়ারপার্সনের কার্যালয় ভাংচুর, মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের শারিরিকভাবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা দলের নির্বাচনী ভরাডুবির আগাম বার্তা দিয়েছিল।
২। ২৫ জন জামাতের যুদ্ধাপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে মনোনয়ন প্রদান: বিষয়টি শুধু দেশবাসীকে বিশেষত তরুণ ভোটারকেই নয় বিএনপির তৃলমূলকেও ক্ষুব্ধ করে।
৩। টাকার বিনিময়ে এলাকায় অগ্রহণযোগ্য, নির্বাচনের অযোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদান: মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের এবং দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই এমন ব্যাক্তিদেরকে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন দেয়ায় ভোটযুদ্ধে নামার আগেই বহুলাংশে পরাজয় ঘটে বিএনপির।
৪। ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফল থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করা: ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জনগণের উপর চালানো নির্যাতন, পাঁচ বছরের দু:শাসন, অপশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, নারী উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা, নারী নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতনসহ অসংখ্য অপকর্মের প্রত্যক্ষ ফল ছিল ২০০৮ এর নির্বাচনী ফলাফল। তার সঙ্গে বড় আকারে যুক্ত হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতার অপরাধ। জনগণ এসব অপকর্মের জবাব দিয়েছিল ব্যালটের মাধ্যমে। দু:খজনক হলেও সত্য সে নির্বাচনের ফলাফল থেকে বিএনপি কোনও শিক্ষা তো গ্রহণ করেইনি বরং পরবর্তী দশটি বছরের প্রথম পাচঁ বছরে সংসদকে কলুষিত করেছে, ভোটারের ভোটের অবমাননা করেছে, নিজেদেরকে শুধরে নেবার বদলে বারবার জঘন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ধরা পড়েছে, দেশ ধ্বংসের নানা খেলায় মেতেছে। আর পরবর্তী পাঁচ বছরে নাশকতা, সহিংসতা, অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দল নয় বরং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের দেশে বিদেশে পরিচিত করেছে।
৫। কোনও ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী না থাকা: সংসদীয় গণতন্ত্রে সাধারণত নির্বাচনে যখন একটি দল অংশ নেয় তখন সেই দলটি জয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী তা আগেই জনগণের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়। বিএনপি এ ব্যাপারে এবারের নির্বাচনে ছিল সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দলের চেয়ারপার্সনের পদ যেমন পরিবারের বাইরে যেতে পারেনি, ঠিক সেভাবেই প্রধানমন্ত্রিত্বের জায়গায় দলীয় অন্যকোনও নেতার নাম তারা জানাতে ব্যর্থ হয়েছিল। আর যেহেতু চেয়ারপার্সন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন উভয়ই নির্বাচনের অযোগ্য কাজেই এ পুরো বিষয়টিই ছিল সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।
৬। ভাড়াটে নেতা দিয়ে নির্বাচন: আপাত দৃষ্টিতে এতবড় দল হওয়া সত্ত্বেও এবং দলে বেশকিছু প্রবীণ ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক থাকা সত্ত্বেও ভাড়াটে নেতার হাতে নির্বাচনী জোটের নেতৃত্ব দেয়া, তাও আবার যে নেতা নির্বাচনী বৈতরণী নিজের জীবনে কখনও জনগণের ভোটে পার হতে পারেননি, বার বার জামানত খুঁইয়েছেন, এমন নেতার হাতে দেয়া, দলটির জন্য আত্মঘাতী হয়েছে কিনা তা তাদের ভেবে দেখতে হবে।
৭। শীর্ষ নেতৃত্বের চরম দুর্নীতি: হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, কমিশন বাণিজ্যসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের চরম দুর্নীতি ভোটারদেরকে বিএনপির প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তুলেছে।
৮। অতীত দু:ষ্কর্মের জন্য ভোটারদের কাছে ক্ষমা না চাওয়া।
৯। নির্বাচনী প্রচারণা না করা: জয়ী হতে হলে সকল প্রার্থীকেই এবং দলকে কার্যকর প্রচারণা চালাতে হয়। বিএনপির অতি বিলম্বে এবং প্রশ্নবিদ্ধ মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ, অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের মনোনয়ন দেয়া, এলাকায় এবং দলের কাছে অগ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া, নেতা কর্মীদের অনেকেই ‘১৩, ‘১৪, ‘১৫ সালের অগ্নি সন্ত্রাস ও নাশকতার ঘটনায় জড়িত থাকায় মামলার আসামী হয়ে এলাকায় অবস্থান করতে না পারায় এবং শুধু টাকার জোরে জিতে যাবে এমন মানসিকতার কারণে বিএনপি প্রার্থীদের দেশের অধিকাংশ স্থানে কোনও কার্যকর প্রচারণা করতে দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকেও কোনও ধরনের সুসংঘবদ্ধ প্রচারণার প্রয়াস দেখা যায় নি। বিএনপি প্রার্থীদের পক্ষে তাদের কোনও সাংস্কৃতিক দল, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড় বা অন্য কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিকেও কোন প্রচারণায় নামতে দেখা যায়নি।
১০। সমন্বয়হীনতা: বিএনপির নিজের দলের ভিতরে কিংবা জোটের শরিকদের মধ্যেও কোনও ধরনের সমন্বয় চোখে পড়েনি বরং পুরোটাই একটা জগা খিচুড়ি অবস্থা বলে মনে হয়েছে।
১১। ভোটারদের অবমাননা ও ভোটের অমর্যাদা: যে ব্যক্তি দণ্ডিত, পলাতক আসামী হবার কারণে নিজে প্রার্থী হবার অযোগ্য সে ব্যাক্তি কর্তৃক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ, যুদ্ধাপরাধীদের এবং দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের মনোনয়ন প্রদান এবং ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ভোটারদের বিশেষত তরুণ ভোটারদের অবমাননা করেছে, তাদের ভোটের অমর্যাদা করেছে বিএনপি।
অন্যদিকে গত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, যার সুফল কম-বেশি ভোগ করেছে প্রায় প্রতিটি মানুষ, নির্বাচনে যোগ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন, অসাধারণ, মনোগ্রাহী প্রচার-প্রচারণা, সকল পর্যায়ে দলের মধ্যে সমন্বয়, শক্ত হাতে সম্ভাব্য বিদ্রোহ দমন, সর্বোপরি দেশজুড়ে মানুষের হৃদয়ে শেখ হাসিনার সফল দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, প্রাজ্ঞ, সাহসী, মানবতাবাদী, দেশপ্রেমিক, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সৃদৃঢ় অবস্থান তৈরী আওয়ামী লীগকে এনে দিয়েছে অনন্য সাধারণ এক বিজয়।
আমাদের এই ভূখণ্ডের নির্বাচনী ইতিহাস প্রমাণ করে এ বিজয় মোটেই অস্বাভাবিক নয়। ১৯৪৬ এর বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির নির্বাচনী ফলাফলে দেখি মুসলিম লীগের ভূমিধস বিজয়, আর এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছিল পাকিস্তান। অথচ মানুষের আকাঙক্ষার বিরূদ্ধে গিয়ে, বাঙালির ভাষার অধিকারের বিরূদ্ধে গিয়ে মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলে মুসলীম লীগ। এই ভূমিধস বিজয়ের পরের নির্বাচনেই ১৯৫৪ সালে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি ইলেকশানে মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত ২২৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট লাভ করে ২২৩টি আসন। প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় মুসলীম লীগ। মুসলীম লীগের পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনসহ বাঘা বাঘা নেতারা শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ২৩ বছর নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ এর নির্বাচনেও শতকরা ৭৭ ভাগ ভোট পেয়ে মাত্র দুটি আসন ছাড়া সকল আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ।
আজ যারা এ বিশাল বিজয়কে অসম্ভব, অবাস্তব এবং কোনও ধরনের বিশেষ কারসাজির ফল হিসেবে দেখতে চাইছেন, দেখাতে চাইছেন, তাদেরকে বলব, এই ভূখণ্ডের নির্বাচনী ইতিহাস দেখুন। তার থেকে শিক্ষা নিন। জনগণের আকাঙক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে ভোটারদের মর্যাদা অবমাননা করেছে বলে এই রকম নির্বাচনী বিপর্যয়ের শিকার হতে হয়েছে বিএনপিকে।
এবারের নির্বাচনে ভোর থেকে সকল কেন্দ্রেে কেন্দ্রে শহর ও গ্রামে নারী পুুরুষসহ সকল ভোটারের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদানকে যারা অস্বীকার করতে চান তারা আর যাই করছেন সত্যকে স্বীকার করছেন না। একই আসনে একাধিক প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনের প্রায় আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াইয়ের মাঠে থেকে দলীয় নেতা কর্মীদেরকে বিভ্রান্ত ও বহুধাবিভক্ত রেখে আর যাই হোক সফল নির্বাচন করা যায় না।
বিএনপি সে কারণেই বহু আসনে বহু কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এজেন্ট দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী মূলত সীমাহীন র্নিলজ্জ মনোনয়ন বাণিজ্য হলেও সে দায় আওয়ামী লীগের ঘাড়ে চাপাবার অপচেষ্টা করছে বিএনপি। যে দলের এমপি প্রার্থীদের অধিকাংশই অন্তত পক্ষে গত ১০ বছর এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়া, এ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা মানুষগুলো হঠাৎ ১০ বছর পরে প্রার্থী হিসেবে এলাকায় আবির্ভূত হলে, কিভাবে বিএনপি প্রত্যাশা করে মানুষ তাদেরকে ভোট দেবে? বিএনপি মিথ্যার স্বর্গে বসবাস করতে পারে কিন্তু জনগণ যারা বিএনপি জামাতের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ও নাশকতার শিকার হয়েছে এবং যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান, যারা হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে, তারা কি করে বিএনপিকে ভোট দেবেন?
জনগণ চায় শান্তি, চায় উন্নয়ন, চায় সমৃদ্ধি। তরুণেরা চায় বাংলাদেশ হোক অমিত সম্ভাবনার এবং সম্ভাবনা বাস্তবায়নের দেশ। নারীরা চায় নিরাপত্তা, সুযোগের সমতা ও মর্যাদা। ব্যবসায়ীরা চায় সুষ্ঠু পরিবেশে ব্যবসা বাণিজ্য করতে, কোনও বিশেষ ভবনের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে নয়। একইভাবে দেশের আপামর জনগোষ্ঠী চায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন, আইনের শাসন এবং মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদমুক্ত একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর, তথ্য প্রযুক্তির সক্ষমতায় সমৃদ্ধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতিতে অগ্রসরমান একটি দেশ সবার কাম্য। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেই বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই বাংলাদেশ গড়ে তুলছেন।
যারা এখনো বিএনপি-জামাত আর আওয়ামী লীগকে একই পাল্লায় মাপতে চান তাদেরকে একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই:
১। বিএনপি-জামাত মানুষকে পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মারে, পঙ্গু করে, আর শেখ হাসিনা বিশ্বের বৃহত্তম বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল গড়েন।
২। বিএনপি-জামাত যুদ্ধাপরাধী, ‘৭৫ এর হত্যাকারী, ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলাকারী, অপারেশন ক্লিন হার্টের খুনিদের দায়মুক্তি দেয়, আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়, আর শেখ হাসিনা সকল খুনির বিচার করেন।
৩। বিএনপি-জামাত হেফাজতকে উসকে দিয়ে, ব্যক্তি ও গোষ্ঠি স্বার্থ চরিতার্থ করতে দেশে নাশকতা করে, অরাজকতা করে ক্ষমতা দখলের উদ্দেশ্যে হেফাজতকে ব্যবহার করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়, আর শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার দরিদ্র ১৫ লক্ষ শিক্ষার্থীকে মূল ধারায় আনতে, তাদের শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করতে, তাদের সনদের স্বীকৃতি দিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।
৪। বিএনপি-জামাত নির্বাচন ঠেকাবার চেষ্টায় ৫০০ স্কুল পুড়িয়ে দেয়, আর শেখ হাসিনা ২৬ হাজার স্কুলকে জাতীয়করণ করেন, স্কুলবিহীন সকল গ্রামে স্কুল স্থাপন করেন।
৫। বিএনপি বিদ্যুৎ দেবার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে খাম্বা বিছিয়ে রাখে, আর শেখ হাসিনা ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেন।
৬। বিএনপি-জামাত আন্দোলনের নামে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে, আর শেখ হাসিনা সরকার তাদের সম্মান, মর্যাদা, পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ, বেতন, ভাতা, আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি করে। সকল বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৭। বিএনপি হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন বানিয়ে দেশকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে, আর শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যাবস্থা করেন।
৮। বিএনপি সার চাইলে গুলি করে কৃষক হত্যা করে, আর শেখ হাসিনা কৃষকের কাছে সুলভ মূল্যে সার পৌঁছে দেন।
৯। বিএনপি-জামাত জঙ্গীকে সঙ্গী করে চলে, দেশের ভবিষ্যৎকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়, আর শেখ হাসিনা শক্ত হাতে জঙ্গি দমন করেন।
১০। বিএনপি-জামাত দেশকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও তথ্য প্রযুক্তির সুযোগ বঞ্চিত করে, পেছনে নিয়ে গিয়ে নারী ও তরুণদের অধিকার হরণ করে, তাদের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে, আর শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন করেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে, গবেষণায় অর্থায়ন করে, কর্ণফুলি নদীর নিচে টানেল নির্মাণ করে, পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তরুণদের জন্য উন্নত বাংলাদেশ গড়েন।
১১। বিএনপি-জামাত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা ধূলোয় লুটিয়ে দেয়, আর শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বীরের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা করেন।
এ তালিকার কোনও শেষ নেই। পাঠকদের সুবিধার্থে আজ এখানেই ইতি টানছি। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক : সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী। বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।