প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করে নিজের জীবনমান উন্নয়ন করা নয়, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য।
আজ বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এফবিসিসিআইয়ের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয় এফবিসিসিআই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে তা ফেলে দেইনি। এ ইশতেহারটা আমাদের সাথে থাকে। এমনকি ছোট করে কপি করে আমরা ব্যাগেও রাখি। কেউ পকেটেও রাখি। সেই সাথে আমরা যখনই কোন প্রজেক্ট হাতে নেই বা প্রতি বছর যখন বাজেট করি তখন প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারের একটি কপি দিয়ে দি। কারণ আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি সেই ওয়াদা পূরণ করতে চাই। শুধু সেই ওয়াদাই নয়, সুযোগ হলে তার চেয়ে বেশিও করি।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার জন্য পরিত্যক্ত সব কল-কারখানা জাতীয়করণ করে উৎপাদন শুরু করিয়ে দিয়েছিলেন। মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় তিনি দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। এমন কোনো সেক্টর ছিল না যেখানে তার হাতের সম্পর্শ লাগেনি। কিন্তু পঁচাত্তরে কুচক্রীদের হাতে শহীদ হওয়ার পর দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি থেমে যায়। ২১ বছর পর আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ব্যবসায়ীরা যাতে সুন্দরভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে সে জন্য আমরা পরিবেশ সৃষ্টি করে দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, গত নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম- ক্ষমতায় যেতে পারলে আমরা ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো। আমরা ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেসরকারি খাতে ছিল না। কিন্তু আমরা যখন দেখলাম দেশে শিল্পায়নের জন্য এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বাড়ানোর জন্য বিদ্যুৎ খুবই প্রয়োজন। এ জন্য আমরা বেসরকারি সেক্টরে বিদ্যুৎ খাতকে ছেড়ে দিয়েছি। ১০, ২০, ৩০ মেগাওয়াট যে যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে তাকে সেইভাবে অনুমতি দিয়েছি।
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া কোনো দেশ উন্নতি লাভ করতে পারে না। মূল ব্যবসা করবে বেসরকারি খাত। সরকারি খাতে ও কিছু ব্যবসা থাকবে সেটা হলো সবকিছু নিয়ন্ত্রণের জন্য। আমরা সেভাবেই সরকারি খাতে কিছু ব্যবসা-বাণিজ্য রেখে বাকি সব ব্যবসা-বাণিজ্য বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের কথা শুনে আমি সত্যিই খুব মুগ্ধ হয়েছি, কারণ আপনারা অনেক সুন্দর করে প্রতিটি সেক্টর তুলে ধরেছেন। আমি যখন বিদেশে যাই তখন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিয়ে যাই। কারণ আমি সব সময় বলি আপনারা আপনাদের ব্যবসায়ী বন্ধু খুঁজে নিন। যেনো আমাদের দেশে আরও বেশি বিনিয়োগ আসে।
তিনি বলেন, অনেকগুলো উন্নয়ন প্রজেক্ট আমরা হাতে নিয়েছি। এগুলো আমাদের শেষ করতে হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ আমাদের জন্য বিরাট একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। দুর্নীতির একটি অভিযোগ আমাদের ওপর আনা হয়েছিল। আমি ছেড়ে দেইনি, আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, যে এটা প্রমাণ করতে হবে। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা দুর্নীতি করে এখানে নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি। ভাগ্য গড়তে এসেছি বাংলার জনগণের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। আমরা চাই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। যেনতেনভাবে নয়, জনগণের ভোটেই আবার ক্ষমতায় আসতে চাই। নির্বাচনে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে সে জন্য সবার সাহায্য চাই।
এ সময় দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নেতারা আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
সম্মেলনে উপস্থিত আছেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, প্রবীণ ব্যবসায়ী নেতা মাহবুবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রোকেয়া আফজাল হোসেন, মীর নাসির হোসেনসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারা।