আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের কটাক্ষের জবাবে মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া বলেছেন, তিনি ইউনূসের মতো ‘যোগ্য’ হয়ে উঠে জনগণের রক্ত শোষক হতে চান না।
রফিক-উল হক শনিবার এক বক্তৃতায় বলেন, ড. ইউনূসের নখের যোগ্য নন দীলিপ বড়–য়া।
এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এক তথ্যবিবরণীতে শিল্পমন্ত্রী জবাব দেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় মুহাম্মদ ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদের তৎপরতার সমালোচনা করে শিল্পমন্ত্রী শুক্রবার এক আলোচনা সভায় বলেন, “আপনাদের যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এতোই ভালো লাগে, তাহলে আপনারা রাজনীতিতে আসুন, রাজনীতিতে এসে কথা বলুন।”
তথ্যবিবরণীতে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “আমার ব্যক্তিগত যোগ্যতা নিয়ে প্রবীণ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক যে কথা বলেছেন, এতে পেশাজীবী হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত সম্মান বাড়লে আমার কোনো দ্বিমত নেই।
“আশা করি, গণতন্ত্র ও মুক্ত চিন্তার অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে ভবিষ্যতে সবাই নিজ নিজ অবস্থান বিবেচনা করে বক্তব্য দিলে দেশ ও জনগণ উপকৃত হবে।”
বিবরণীতে বলা হয়, “রোববার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক এবং শনিবার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদ যাতে জনমনে কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে সেজন্য শিল্পমন্ত্রীর এই বক্তব্য।”
দিলীপ বড়–য়া বলেন, “ব্যারিস্টার রফিক-উল হক দেশের একজন শ্রদ্ধাভাজন আইনজ্ঞ। এরশাদ সরকারের আমলে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। পরবর্তীতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীর মামলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছেন।
“এ ধরনের যোগ্য ও প্রবীণ আইনজ্ঞ- দিলীপ বড়–য়ার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তিনি ড. ইউনূসের নখের যোগ্যও নন- বলে যে মন্তব্য করেছেন, তার সাথে আমি পুরোপুরি একমত।”
ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “কারণ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে যেভাবে দেশের সাধারণ মানুষের রক্ত শোষণ করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, সে যোগ্যতা আমি অর্জন করতে পারিনি, ভবিষ্যতেও সে সম্ভাবনা নেই।”
শিল্পমন্ত্রী বলেন, “আমার রাজনৈতিক আদর্শ হচ্ছে, জনগণের সেবা করা। গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে কত লোক যে বাস্তুভিটা হারা হয়েছেন, কতলোক আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, তার খবর শ্রদ্ধেয় ব্যারিস্টার রফিক-উল হক না জানলেও, গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশবাসী এ বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন।”
মহাজোট সরকারের টেকনোক্রেট মন্ত্রী দিলীপ বলেন, “ব্যারিস্টার রফিক-উল হক মন্ত্রী হিসেবে আমার ব্যক্তিগত যোগ্যতাকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নখের সঙ্গে তুলনা করে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকার তথা জনগণের সম্মানকে যেভাবে তাচ্ছিল্য করেছেন, সে বিষয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করা তাঁর পেশা ও ব্যক্তি মর্যাদার জন্য কোনোভাবেই সম্মানজনক হবে না বলে আমি মনে করি।”
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ১৯৬৯ সালে আইয়ুব-মোনায়েম বিরোধী আন্দোলনের অংশগ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া ১৯৮৩ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার এবং নির্যাতিত হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
“সম্ভবত ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ বিষয়গুলো অবহিত নন,” বলেন শিল্পমন্ত্রী।
“এছাড়া অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও গণতন্ত্রের একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে আমি ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রাজপথে যে ভূমিকা পালন করেছি, আশা করি, এর সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তুলনা হবে না,” যোগ করেন দীলিপ।