আমি ক্ষমাপ্রাপ্ত: গোলাম আযম

আমি ক্ষমাপ্রাপ্ত: গোলাম আযম

মানবাতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে এসময় তিনি নিজেকে একাত্তরের ঘটনায় “ক্ষমাপ্রাপ্ত“ বলে দাবি করেন।

রোববার তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দায়ের করা অভিযোগগুলো পড়ার পর ট্রাইবুন্যাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক আসামির কাঠগড়ায় বসে থাকা গোলাম আযমকে জিজ্ঞেস করেন, “প্রফেসার সাহেব আমার পড়া অভিযোগগুলো আপনি শুনেছেন এবং বুঝতে পেরেছেন। এখন আপনি আমাকে উত্তর দিন, আপনি কি দোষী, না নির্দোষ?“

ট্রাইব্যুনাল চলাকালীন পুরোটা সময় গোলাম আযম তার মাথা থেকে জিন্নাহ টুপিটি খুলে রাখলেও, এ পর্যায়ে এসে টুপিটি মাথায় পরে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেন, “ট্রাইব্যুনালের সম্মানিত বিচারপতিদের কাছে আবেদন, আমার কিছু কথা বলার আছে।”

তখন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা তো আপনার সব কথা নিতে পারবো না। রেকর্ড হবে শুধু একটি কথা- আপনি দোষী, না নির্দোষ?”

গোলাম আযম তখন বলেন, “আমি নিজেকে দোষী মনে করি না। আমার বিরুদ্ধে যেসব দীর্ঘ অভিযোগ পড়া হলো তা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই, যদি অনুমতি দেন।”

ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে তিনি বলেন, “১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচালনায় ৭১’র যুদ্ধাপরাধীদের যে তালিকা করেছিল সেখানে আমার নাম নেই। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের তখন তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।”

গোলাম আযম বলেন, “তখন ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে তালিকাভুক্ত ১৯৫ জনকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। শেখ মুজিবুর রহমান তখন দালালদেরও ক্ষমা করে দেন। সে হিসেবে আমি একাত্তরের ঘটনায় ক্ষমাপ্রাপ্ত।’

তিনি বলেন, “২০০১ সালের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে কথা বলেনি, বলেছে নির্বাচনের পর। তখনকার নির্বাচনে দেখা যায় আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি অনেক বেশি আসন পেয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোটের করণেই আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে।”

এরপর সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যায়। তখন তারা বুঝতে পারে জামায়াতকে রাজনীতি এবং নেতাদের ময়দান থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। সে কারণেই মূলত একাত্তরের ভূমিকার জন্য বিচার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য ট্র্যাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “শেখ মুজিব পাকিস্তান ভাঙতে চাননি।”

এসময় ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “প্রফেসার সাহেব এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য, তা আমরা শুনে কি করবো।”

কিন্তু গোলাম আযম বলে যেতে থাকেন, “শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। এছাড়া ভারত তখন নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে, স্বাধীনতার জন্য নয়। শেখ মুজিব যদি নিজেই যুদ্ধ ঘোষণা করতেন তাহলে নিজে গ্রেফতার হতেন না।”

ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নিজামুল হক তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “আমি বুঝতে পারছি আপনার অনেক কিছু বলার আছে। কিন্তু আজ এসব শুনবো না।”

এসময় ট্রাইব্যুনাল সদস্য বিচারপতি একেএম জহির আহমেদ গোলাম আযমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনার যখন সাক্ষ্য চলবে তখন আপনি এগুলো বলতে পারবেন। কিন্তু আজ নয়।”

রাজনীতি