প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ঘাতক উল্লেখ করে বলেছেন, দুঃখ যে আমি জিয়ার বিচার করতে পারলাম না। তার আগেই জিয়া মারা গেলেন। জিয়া ঘাতকদের বলেছিলেন এগিয়ে যাও, আমি আছি। খুনি মোস্তাকও বেইমানি করেছিল।
আজ বুধবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আগস্ট উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জিয়াউর রহমান এই হত্যার সঙ্গে সম্পূর্ণ জড়িত ছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দূতাবাসে চাকুরি দিয়ে পুরষ্কৃত করে। আমাকে আর রেহানাকে দেশে আসতে দেয়নি। রেহানার পাসপোর্ট আটকে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। বিকৃত ইতিহাস এদেশের মানুষকে শোনানো হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। সত্যকে চাপিয়ে রাখা যায় না।’
বিবিসি’কে দেওয়া খুনি কর্নেল রশিদের সাক্ষাতকারের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইন্টারভিউতে বলেছিল— তারাই জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। কেন হত্যা করেছিল প্রশ্নের জবাবে রশিদ বলেছিল— বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা কমানোর বহু চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তার পাহাড় সমান জনপ্রিয়তা কোনোক্রমেই কমানো যায়নি। কাজেই ওদের হত্যা ছাড়া নাকি আর কোন পথ তাদের ছিল না। তারা এটাও বলে— তাদের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সম্পর্ক ছিল। তারা জিয়াউর রহমানকে জানিয়েছিল এবং জিয়াউর রহমান এগিয়ে যাও বলে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল। সে বলেছিল— আমরা সবাই তোমাদের সঙ্গে আছি।’
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বিধ্বস্ত অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত হয়েছিল। গৃহহারা মানুষকে ঘরবাড়ি করে দিয়েছিলেন। ইউনিয়নে ইউনিয়নে হাসপাতাল করে দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন দেশটি কেবল উঠে দাঁড়াচ্ছিল, মানুষ শান্তির মুখ দেখছিল, তখনই আঘাতটি এলো।’
বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘কী দুর্ভাগ্য আমাদের! অতি পরিচিত জন— খুনি রশিদ, ফারুক, ডালিম, নূর। এরা কারা? এদের তো প্রতিনিয়ত আমাদের বাসায় যাতায়াত ছিল। ডালিম, তার শাশুড়ি, বউ, শালীতো দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকতো। মুক্তিযুদ্ধে যখন জেনারেল ওসমানীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হলো— তখন কামালকে এডিসির দায়িত্ব দেওয়া হলো। নূরকেও এডিসির দায়িত্ব দেওয়া হলো। তারা দু’জন কর্নেল ওসামানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। সেই নূর নিজেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত ছিল। খুনি মোস্তাক আমাদের দলেরই একজন ছিল, কিন্তু সে বেইমানি করলো, মুনাফেকি করলো।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানিরাও একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি। কিন্তু যে বাংলার মানুষের ওপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল— তিনি ভাবতে পারেননি, এই বাংলার মাটিতে কেউ তাকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু সেই বাংলার মাটিতে বিশ্বাসঘাতকের দল তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করছে।’
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়েছিল বলেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছি। হত্যার বিচার করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। এখনও কিছু খুনি লুকিয়ে রয়েছে বিদেশে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের ফিরিয়ে আনতে।’
বঙ্গবন্ধুর বিচারে দেশি-বিদেশি নানান বাধা-বিপত্তির প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘বিচার করতে গিয়ে অনেক হুমকি, অনেক ধমকি, অনেক কিছুই আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। বাংলাদেশের কথা বললে বঙ্গবন্ধু চলে আসে, এজন্য সেই নাম সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলার চেষ্টা— ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো যাবে না, কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমার ওপর বার বার আঘাত এসেছে। আবারও হয়তো আসবে, কিন্তু সেগুলো আমি পরোয়া করি না। মৃত্যুকে আমি কখনও পরোয়া করি না। এটুকু শুধু মনে করি— আমি বেঁচে তো আছি, বাবার অধরা কাজগুলো সম্পন্ন করতে। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে। দেশকে বিশ্বের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে। অন্তত বলতে পারি— আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদার আসন পেয়েছে। আজকে যখন দেশের জন্য একটি অর্জন করি, শুধু এটুকু মনে হয় যে, আমার বাবা-মা বেহেস্ত থেকে নিশ্চয় দেখতে পান, তাঁর দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। এটা দেখে নিশ্চয়ই আমার আব্বা-মার আত্মা শান্তি পায়। আমার বিশ্বাস এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিতে পারবো।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজের রক্ত দিয়ে দেশের প্রতি তার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়ে গেছেন। আমাদের সেই রক্তের ঋণ শোধ দিতে হবে। বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলে ওই রক্তের ঋণ শোধ করবো। ইনশাআল্লাহ, আমরা তা পারেবা। আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।’
সবার কাছে দোয়া চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, এই গতি যেন থেমে না যায়। আমরা যেন এগিয়ে যাওয়ার এই গতি ধরে রেখে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।’
কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন।