`…লে বাবা, এবার নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমা।` প্লট বিক্রির এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে প্রতারণা করে ক্রেতা সাধারণের কয়েক শ` কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সেই আশিয়ান সিটি এখন জমি দখলের নয়া কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া খিলক্ষেত বরুয়া এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের নামে ২২টি নিরীহ পরিবারের প্রায় সাড়ে ১৩ বিঘা জমি জোর করে দখল করে নিয়েছেন।
রাজউক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই দখল করা জমিতে হাসপাতাল নির্মাণের আয়োজন করছেন সন্ত্রাসীদের গডফাদার নজরুল ইসলাম। জমি হারানো অসহায় নিরীহ মানুষ নজরুলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারছেন না। তারা বলছেন, হাসপাতালের কথা বলে নজরুল বহু মানুষের জমি অবৈধভাবে দখল করে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে মামলা, সাধারণ ডায়রি করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। আইনের সাহায্য চাইতে গিয়ে উল্টো পুলিশের ধমক ও সন্ত্রাসীদের হুমকির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শুধু এ ১৩ বিঘা জমিই নয়, হাসপাতালকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষের শত শত বিঘা জমি দখল করে নজরুল গড়ে তুলছেন তার আবাসন প্রকল্প। এসব এলাকায় বসবাসকারী অগণিত মানুষের নিজস্ব চাষযোগ্য জমিসহ তাদের পৈতৃক ভিটেমাটি ও সাধারণ মানুষের কেনা জমিও জোর করে দখলে রেখেছেন নজরুল।
প্রভাবশালী একটি মহলের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরেই আশিয়ান সিটি এ দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। পেশাদার সন্ত্রাসী ও খুনিদের দিয়ে নজরুলের অবৈধ দখলের মহোৎসব চলছেই। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর খিলক্ষেতের বরুয়া মৌজায় ১০২৬ নম্বর দাগের হাছেন আলী গং, ১০২৭ নম্বর দাগের হাসিদা আক্তার গং ও ফারুক হোসেন হাদী গং, ১০২৮ নম্বর দাগের শফিউল্লাহ গং, ফারুক হোসেন হাদী গং, নূরু মিয়া গং, সিরাজ উদ্দিন গং, কদরবানুর পক্ষে সাইফুল ইসলাম, ১০২৯ নম্বর দাগের ছিদ্দিকুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, হাছেন আলী গং, সাহাবুদ্দিন গং, হাজেরা বেগম, নূর হোসেন গং, তাজিমুদ্দিন, ১০৩১ নম্বর দাগের আবুল কাশেম গং, ১০৩২ নম্বর দাগের সফর উদ্দিন, ছামসুল হক গং, রাশিদা ইসলাম, এখতিয়ার হাসান মিলন, ১০৩৪ নম্বর দাগের মুগলি বেগম এবং মোক্তার হোসেন গংয়ের ১৩ বিঘা ১৯ শতাংশ জমি জোর করে দখল করে নিয়েছেন আশিয়ান সিটির নজরুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হাসপাতাল নির্মাণের কথা বলে আশিয়ান সিটির নজরুল ইসলাম ২২টি পরিবারের ১৩ বিঘা ১৯ শতাংশ জমি দখল করে নেন। হাসপাতালকে পুঁজি করে এ ১৩ বিঘা ১৯ শতাংশ জমি ছাড়াও আশপাশের আরও বহু নিরীহ পরিবারের জমি দখল করে নিচ্ছেন তিনি। রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই নজরুল হাসপাতাল নির্মাণের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন।
তারা বলছেন, হাসপাতাল নির্মাণ করা নজরুলের প্রধান কাজ নয়। তার মূল লক্ষ্য হাসপাতাল দেখিয়ে নিরীহ মানুষের জমি দখল করা। নজরুলের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী খিলক্ষেত বরুয়া এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বাসিন্দাদের বলা হচ্ছে তারা যেন বাড়িঘর ছেড়ে এলাকা থেকে অন্যত্র চলে যায়। কেউ তাদের এ কথায় রাজি না হলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বেশ কয়েকজন বাসিন্দাকে জোর করে ঘর থেকে বের করেও দেওয়া হয়েছে।
ঘরবাড়ি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় ওই সব পরিবার এখন সর্বহারা। পথে পথে ঘুরতে হচ্ছে তাদের।সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বরুয়ার বাসিন্দাদের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা আশঙ্কা করছেন, যে কোনো সময় নজরুলের সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের বাড়ি দখল করে নেবে। ভয়ে তারা তার বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতেও পারছেন না। নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় বাসিন্দা ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ জানান, বহু লোকের জমি দখল করে নিয়েছেন নজরুল। আমার জমির ওপরও তার চোখ পড়েছে। বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি দখল করে নিতে চাচ্ছেন। অন্যের জমি জোর করে দখল করে হাসপাতাল নির্মাণের দরকার কী?স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বিভিন্ন উপায়ে দীর্ঘদিন ধরেই নজরুল অসহায় মানুষের জমি দখল করে নিয়েছেন। এখন নয়া কৌশলে জমি দখলের চেষ্টা চলছে। হাসপাতাল যেহেতু সেবাদানের প্রতিষ্ঠান।
হাসপাতালের কথা বলে এখন তিনি মানুষের জমি দখল করে নিচ্ছেন। সরকার এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিলে বরুয়ায় গণবিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলে স্থানীয় লোকজন আশঙ্কা করছেন। সূত্র জানায়, চিহ্নিত দখলবাজ, সন্ত্রাসীদের গডফাদার নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া রাজধানীর বুকে `আশিয়ান সিটি` নামে প্রতারণার ফাঁদ ফেলে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের টাকা আত্দসাৎ করে এলেও প্রশাসন নির্বিকার। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র রাখা, হত্যাপ্রচেষ্টা, দখলসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে।
বেশ কয়েকবার কারাবরণ করলেও রহস্যজনক কারণে জামিনে ছাড়া পান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করলেও লাভ হয়নি তাতে। সব সরকারের আমলে প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা ও দখলের মচ্ছব চালাচ্ছেন নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এখন হাসপাতাল নির্মাণের নামে নতুন কৌশলে জমি দখলের মহোৎসব শুরু করছেন নজরুল। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ রীতিমতো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।
তাদের প্রশ্ন, প্রতারণা করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া নজরুলের শক্তির উৎস কোথায়?
জানা গেছে, ২০০৫ সালে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। ওই সময় আশিয়ান সিটির অংশীদার ছিলেন তৎকালীন জোট সরকারের প্রভাবশালী নেতারা। এ কারণে আশিয়ান সিটি রাজউকের কোনো অনুমোদন না নিয়েই যাত্রা শুরু করে। ঢাকার বরুয়া-ডুমনির সরকারি জলাশয় ভরাট ও অবৈধভাবে দখল করা জমিতে গড়ে তোলা ভূমিদস্যু খ্যাত নজরুলের আশিয়ান সিটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হলেও সেগুলোর কার্যকারিতা আদালতে থেমে রয়েছে।