রাজধানী ঢাকার কাংখিত বিকেন্দ্রীকরণ ধামা চাপা পড়ে গেলো অগণতান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যাবহারে। প্রশাসন ও নাগরিক সুবিধা জনগণের দোর গোড়ায় নেবার উদ্যোগটি রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপে জনপ্রশান্তির বদলে পরিণত হলো জন-উৎকণ্ঠায়! ক্ষমতাসীনরা জনগনকে বলার-বোঝানোর ভাষা মাত্র তিনবছরেই ভুলে বসেছেন।শোনার ধৈর্য ও উদার্য্য হারিয়েছেন বিলক্ষণ আগে। বিরোধীদলতো এখনো গেলো নির্বাচনের ভরাডুবির প্রেক্ষাপট ও প্রেক্ষিতের টার্মসে আসতেই পারেনি। মধ্যিখানে বাংলাদেশের সকল আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকা হয়ে উঠছে ভাগ্যান্বেষী মানুষের ভীড়ের এক নাগরিক জংগল। নাগরিক সুবিধার অপ্রতুলতা আর অপরিকল্পনায় বেড়ে উঠা, বেড়ে যাওয়া ঢাকার সব সেবা সুবিধা এখন সিচুরিয়েশন পয়েন্টে। বিনা ঘোষণায় যে কোন মুহূর্তে কলাপস করতে পারে সবকিছু।
মফস্বলের ফ্লেভার মেশানো স্বাধীন বাংলাদেশের ছোট্ট ঢাকা পৌরসভা হাফ প্যান্ট ছেড়ে কখন সাবালক ফুল প্যান্টের দাঁড়ি গোঁফের পৌর কর্পোরেশন হয়ে উঠেছে সেটা রাজনৈতিক নেতৃত্ব বুঝতেই পারেন নি। দলীয় রাজনীতির ফায়দায় রাজনীতিবিদেরা বারবার ঢাকাকে সম্প্রসারিত করেছেন কিন্তু সেই সম্প্রসারণ কেবল
পরিকল্পনাহীন ও অপুষ্টির শিকারই ছিলোনা, ছিলো নাগরিক সুবিধাহীন ভৌগলিক সম্প্রসারণ মাত্র। ঢাকার পৌর পিতারা মনস্ক ছিলেন নিত্য নতুন মার্কেট নির্মাণের বাণিজ্যিক মিশনে। খেলার জমিকে মার্কেটে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় ঢাকা পৌর কর্পোরেশন পরিণত হয়েছিলো লাভজনক ব্যক্তিগত মুনাফায়। সেই ধারবাহিকতায় ফুটপাতগুলো অলিখিত লেনদেনে ‘বিক্রি কিংবা লীজ’ দেবার প্রথা চালু হয়েছে। বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন যাতায়ত সুবিধার হাব তৈরিতে ব্যস্ত পৌর পিতাদের সময় হয়নি নাগরিকদের মৌলিক সেবা প্রদানে। পৌর পিতারা দাপটের সাথে আট থেকে বারোজন সাংসদের চেয়েও বেশী ক্ষমতাশীল ও রোজগেরে ছিলেন। একজন পৌর পিতাদের একজনতো খ্যাতিমান হয়েছিলেন ‘থিফ অব বাগদাদ’।
রাজধানী ঢাকার ‘আয়ুস্কাল’ প্রায় শেষ। সূয়ারেজ সিস্টেম যেকোন সময় উপচে দেবে আবর্জনা। দুর্গন্ধে ঘর থেকে বের হবার জো থাকবেনা। যানজটে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্হাকে চূড়ান্ত অব্যবস্হা বল্লে অত্যুক্তি হবেনা। মহল্লার গলিগুলোও প্রতাপশালীদের বাড়তি দখলে। পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে নাগাল রাজধানীবাসী। আইন শৃংখলার অবনতি, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য এখন অসহনীয়। আবাসিক এলাকা বলে কিছুই নেই। একটা ভালো স্কুলের দিশা পাওয়া অসাধ্য এক স্বপ্ন। মণিং ওয়াকে যাবার মতো একটুকরো সড়ক অবশিষ্ট নেই। উধাও পার্ক। খেলার মাঠ। পুরো রাজধানী এখন এক বড়সড় শপিং সেন্টার। দোকান-নির্ভ র অর্থনীতিই ঢাকার মূল চালিকা শক্তি। রাজউক নামীয় প্রতিষ্ঠানের নক্সা অনুমোদনে নাগরিক সুবিধাদি ও নিরাপত্তার কোনো বিবেচনা নেই। সবখানে চলে টাকার খেলা। কারো বাইশ শত স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের কর প্রতিবেশীর ছয়শত স্কয়ারের চেয়েও কম। ভোগান্তি ভিন্ন কোনো কিছুই রাজধানী ঢাকাতে মেলেনা। উল্টো লাগে নগদ নারায়ণের দোয়া।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে আন্তর্জাতিক মানের বদলে কেবল বাসযোগ্য করে তোলার জন্যে চাই সৎ নেতৃত্ব। চাই কমিটেড পৌরপিতা। নৌকা-ধানের শীষ-লাংগল- দাঁড়িপাল্লা ব্রান্ডে এইসব সমাধান হবেনা। এজন্যে চাই দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণতার উর্ধ্বে থাকা ব্যক্তি নেতৃত্ব। নারায়ণগঞ্জবাসী রাজনৈতিক ব্র্যান্ড প্রত্যাখানের মাধ্যমে সন্ত্রাস আর দলীয় মস্তানদের গুডবাই জানিয়েছেন। আইভীর বিজয় সাধারণ মানুষের ভবিষ্যত নগরী কল্পনার বাস্তবায়নের স্বপ্ন। সন্ত্রাসকে প্রত্যাখান। পত্রিকায় দেখলাম মাহমুদুর রহমান মান্না সম্ভাব্য প্রার্থী ঢাকা উত্তরের। যদি সত্য হয় ঢাকাবাসীর জন্যে এটা হবে সুসংবাদ। ব্যক্তি মান্নার ইমেজে দুর্নীতির কোনো তকমা নেই। নেই দলীয় জ্বি হুজুর জাতীয় কোনো অপবাদ।
চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে, একাউন্টেবল ঢাকা উত্তর পৌর কর্পোরেশনের জন্যে, সুপ্রশস্ত রাস্তা-ঘাট-পার্ক-খেলার মাঠ, দখল মুক্ত ফুটপাতের জন্যে মান্না কিংবা মান্নাদের মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। বাসযোগ্য ঢাকা নির্মানে সেবা সুবিধা দেবার মতো মানসিক শক্তির অধিকারী নেতৃত্ব চাই। চাঁদাবাজ ছেলের পিতাদের দিয়ে কেবল চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বাড়ত চাষাবাদ ও প্রসার সম্ভব। অন্য কোনো কিছু নয়।
সিদ্ধান্ত নেবার মালিক ঢাকাবাসী। তারা যেমন ঢাকা চাইবেন তেমন নেতৃত্বই নির্বাচিত করবেন। ভুল করলে ভোগান্তি তাদেরই হবে। আমি মান্নাকেই ভোট দেবো আগামী প্রজন্মের ঢাকার স্বার্থে।