রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় ৪৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য ২১ মে দিন ধার্য করা হয়েছে।
রোববার সকালে জামিনে থাকা একমাত্র আসামি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করলে মুখ্য মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ এ দিন ধার্য করেন।
মামলার নথি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর জামিন শুনানির জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে আছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় ৪৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর নুরুল আমিন।
বিএনপির আরেক যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন জামিনে থাকায় বাকি ৪৪ নেতাকর্মীর সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছিল। ২১ মে এসংক্রান্ত আদেশ হতে পারে।
যাদের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তারা হলেন পুড়িয়ে ফেলা বাসটির কনডাক্টর সোহেল ওরফে সোহান মিয়া, হেলপার মো. জসিম উদ্দিন, মানিক রতন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, এমকে আনোয়ার, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সংসদ সদস্য ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান রতন, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান খোকন, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ঢাকা মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম মজনু, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক ইয়াছিন আলী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আঃ মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাছির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ লিটু, বিএনপি নেতা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবুল বাসার, বিএনপি নেতা ও ৪০ নং ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান ওরফে এল রহমান, বিএনপির সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান, খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক কমিশনার ইউনুছ মৃধা, ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল নুরুল ইসলাম বুলবুল, ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী দেলোয়ার হোসেন সাইদী, তিতুমীর কলেজের ছাত্রদল সভাপতি মো. ইসমাইল খান শাহীন, মোহাম্মদপুর থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. মান্নান হোসেন শাহীন, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমীর মো. মকবুল আহমদ।
আসামিদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ইসমাইল খান শাহীন, মান্নান হোসেন শাহীন, সোহেল মিয়া, মো. জসীম, মানিক রতন ও কামরুজ্জামান রতন বর্তমানে কারাগারে আছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হবার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করতে হবে। তবে আইনে নির্ধারিত এ সময় বাধ্যতামূলক নয়। নির্ধারিত সময়ের পরেও বিচার চলতে পারে।’
ঢাকা মহানগরের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি বলেন, “বিচারে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে দ্রুতবিচার আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী আসামীদের দুই থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। একই সঙ্গে অর্থদণ্ডও করতে পারবেন আদালত।“
উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের পর রাত ৯টা ৫ মিনিটে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা। এ ঘটনায় তেজগাঁও থানাপুলিশের উপ-পরিদর্শক ইসমাইল মজুমদার বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।