তিন সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ চলছে

তিন সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ চলছে

রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। আজ সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে।

নির্বাচনের দিন ভোট দেয়ার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনে ভোটাররা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এ জন্য কমিশন সব কিছু করবে উল্লেখ করে ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন।

সচিব জানান, গাজীপুরের মতো এই তিন সিটিতেও ভোট গ্রহণ পরিস্থিতির তথ্য তাৎক্ষণিক জানার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে দুই ঘণ্টা পরপর প্রয়োজনীয় সার্বিক তথ্য কমিশন সচিবালয়কে জানাবেন। কোনো কেন্দ্রে জাল ভোট বা সিল মারার ঘটনা ঘটলে বা তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে কমিশন।

ভোট কেন্দ্রে কোনো অঘটন বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে কর্মকর্তারা এসএমএসের মাধ্যমে কমিশনকে জানাবেন। এক্ষেত্রে কমিশন ঢাকায় বসে এসব এসএমএসের তথ্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

হেলালুদ্দীন জানান, ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতি, ভোটার, প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের গতিবিধি এবং সর্বোপরি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনসহ সব কিছু সাধারণ পোশাকে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করবেন ইসির নীরব পর্যবেক্ষকরা। প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম দেখলে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত করা এবং প্রয়োজনে তারা কমিশনকেও ঘটনার তথ্য জানাবেন।

এ ছাড়া নির্বাচনের নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে থেকে তিন সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে র‌্যাবের একটি টিম এবং প্রতি দুটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে ১৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এরা নির্বাচনের পরদিন পর্যন্ত এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। আরো ৪ প্লাটুন করে বিজিবি রিজার্ভ রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

আচরণবিধি দেখভাল করতে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৪ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত ২৪ দিন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন সিটিতে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে। ১০ জুলাই থেকে ১ আগস্ট এই ২৩ দিন ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন সিটিতে আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। এছাড়া নির্বাচনের দুই দিন আগে থেকে পরদিন পর্যন্ত আচরণ বিধি প্রতিপালন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতি সিটিতে ২০ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আজ থেকে পরবর্তী চার দিন রাজশাহী ও বরিশালে ১০ জন করে এবং সিলেটে ৯ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ২ লাখ ৪২ হাজার ৬৬৬ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন।

কমিশন সূত্র জানায়, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। এ নির্বাচনে ভোটের আগের দু’দিন থেকে ভোটের পরদিন পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকছে। প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র পাহারায় ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। বাকি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর মো. শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মুরাদ মোর্শেদ (হাতী)।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ (নৌকা), বিএনপির মো. মজিবুর রহমান সরোয়ার (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ওবায়দুর রহমান মাহবুব (হাতপাখা), বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির আবুল কালাম আজাদ (কাস্তে), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের মনীষা চক্রবর্তী (মই) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. ইকবাল হোসেন (লাঙ্গল)।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দীন আহম্মদ কামরান (নৌকা), বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান (হাতপাখা), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের-বাসদ মো. আবু জাফর (মই) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এহসান মাহবুব জোবায়ের (টেবিল ঘড়ি), মো. এহসানুল হক তাহের (হরিণ) ও মো. বদরুজ্জামান সেলিম (বাস)। তিন সিটিতে ৫৩০ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রাজশাহী সিটিতে ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে ১৩৮টি ভোট কেন্দ্র ও ১ হাজার ২৬টি ভোট কক্ষ রয়েছে। বরিশাল সিটিতে ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে ১২৩টি ভোট কেন্দ্র ও ৭৫০টি ভোট কক্ষ রয়েছে এবং সিলেট সিটিতে ২৭টি সাধারণ ও ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে ১৩৪টি ভোট কেন্দ্র ও ৯২৬টি ভোট কক্ষ রয়েছে।

সচিব জানান, আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বরিশালে ১০টি, রাজশাহীতে দুইটি ও সিলেটে দুইটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।

রাজশাহী সিটিতে সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বরিশালে মুজিবুর রহমান ও সিলেটে মো. আলিমুজ্জামন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
খবর বাসস

Featured বাংলাদেশ শীর্ষ খবর