প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এফডিসি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। এখন চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য যা যা করা দরকার, আমি সব করে দেব।
তিনি আজ রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- ২০১৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এফডিসি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। আমরা আর কোনও ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকতে চাই না। কাজেই শিল্পের দিক থেকেও বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্পের দিক থেকেও আমরা যেন বিশ্ব মানের চলচ্চিত্র তৈরি করে এগিয়ে যাই। তার জন্য যা করা দরকার আমি করবো। আমি জানি আমার বাবার হাতে তৈরি করা এই এফডিসি। তাই এই শিল্পের জন্য যা যা করা দরকার আমি আমার পক্ষ থেকে করে দেব।’
বক্তৃতার শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ, ইজ্জত হারানো ২ লাখ মা বোনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
চলচ্চিত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে অনেক কথা বলা যায়। সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখা যায়। একটা সময় মানুষ একটা কারণে এই চলচ্চিত্র দেখা বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন কিন্তু আবার চলচ্চিত্রের জগতটা ফিরে আসছে। আমি আশা করি আমাদের চলচ্চিত্র আধুনিক হবে। চলচ্চিত্রশিল্পীরা আরও আধুনিক হবেন। কারণ, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। সুতরাং আমি আশা করি চলচ্চিত্র উন্নত হোক, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছে যাক। আমি দেখেছি দেশে অনেক ভালো চলচ্চিত্র হয়। সব সময় তো সিনেমা দেখার সুযোগ হয় না। যখন বিমানে করে যাই তখন অবশ্যই সিনেমা দেখি। এই একটাই সুযোগ। নিরিবিলি সুযোগ। তাছাড়া তো সারাদিন ফাইল আর মিটিং নিয়েই ব্যস্ত থাকি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আমাদের যে সংগ্রাম তা তুলে ধরা প্রয়োজন। এসময় তিনি চলচ্চিত্র শিল্পীদের কাছে যেতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন এবং যারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে যারা পাবেন তাদের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি রহমত উল্লাহসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষেরা। তথ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (বিএফডিসি) যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য সরকার এ বছর ২৬ বিভাগে ২৯ জন শিল্পী ও কলাকুশলীকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
এক নজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার- ২০১৬
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : অজ্ঞাতনামা
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : ঘ্রাণ
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র : জন্মসাথী
শ্রেষ্ঠ পরিচালক : অমিতাভ রেজা চৌধুরী (আয়নাবাজি)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (প্রধান চরিত্র) : চঞ্চল চৌধুরী (আয়নাবাজি)
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (প্রধান চরিত্র) : যৌথভাবে আফরোজা ইমরোজ তিশা (অস্তিত্ব) ও কুসুম শিকদার (শঙ্খচিল)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা (পার্শ্ব চরিত্র) : যৌথভাবে আলীরাজ (পুড়ে যায় মন) ও ফজলুর রহমান বাবু (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (পার্শ্ব চরিত্র) : তানিয়া আহমেদ (কৃষ্ণপক্ষ)
শ্রেষ্ঠ খল-অভিনেতা : শহীদুজ্জামান সেলিম (অজ্ঞাতনামা)
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী : আনুম রহমান খান সাঁঝবাতি (শঙ্খচিল)
শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক : ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে)
শ্রেষ্ঠ গায়ক : ওয়াকিল আহমেদ (দর্পণ বিসর্জন, গান: অমৃত মেঘের বাড়ি…)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা: মেহের আফরোজ শাওন (কৃষ্ণপক্ষ, গান: যদি মন কাঁদে…)
শ্রেষ্ঠ গীতিকার: গাজী মাজহারুল আনোয়ার (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, গান: বিধিরে ও বিধি বিধি..)
শ্রেষ্ঠ সুরকার : ইমন সাহা (মেয়েটি এখন কোথায় যাবে, গান- বিধিরে ও বিধি বিধি..)
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার : তৌকীর আহমেদ (অজ্ঞাতনামা)
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার : অনম বিশ্বাস ও গাউসুল আলম (আয়নাবাজি)
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক : ইকবাল আহসানুল কবির (আয়নাবাজি)
শ্রেষ্ঠ শিল্পনির্দেশক : উত্তম গুহ (শঙ্খচিল)
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক : রাশেদ জামান (আয়নাবাজি)
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক : রিপন নাথ (আয়নাবাজি)
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা : যৌথভাবে সাত্তার (নিয়তি) ও ফারজানা সান (আয়নাবাজি)
শ্রেষ্ঠ মেকাপম্যান : মানিক (আন্ডার কনস্ট্রাকশন)