বাজেটে ফ্রিজ এসি মোটরসাইকেল আমদানি নিরুৎসাহিত করার দাবি

বাজেটে ফ্রিজ এসি মোটরসাইকেল আমদানি নিরুৎসাহিত করার দাবি

আগামী বাজেটে দেশীয় শিল্প বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন দেশি উৎপাদনকারীরা।

এজন্য আমদানি নিরুৎসাহিত করে দেশিয় উদ্যোক্তাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার দাবি উঠেছে।

বিশেষ করে দেশে তৈরি ফ্রিজ, এসি, মোটরসাইকেল ও টিভি উৎপাদন খাতে সরকারের আরও বেশি সহানুভূতিশীল হওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সেইসঙ্গে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করতে এসব পণ্যে আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধের কথাও বলছেন তারা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২০১২-১৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট সামনে রেখে দেশিয় উৎপাদন বন্ধে নানা দিক থেকে যড়যন্ত্র হচ্ছে।

দেশে যাতে ভারি কোনো শিল্প বিকশিত হতে না পারে, পুরো বাজার আমদানি নির্ভর থেকে যায় সেজন্য একটি মহল ম্যানুফ্যাকচারিং এর পরিবর্তে আমদানিকে অধিকতর সুবিধা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে।

সেইসঙ্গে ব্যাপক আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি দেবার পাশাপাশি দেশিয় শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে।

গত ৩০ জানুয়ারির একটি আমদানিপত্রে দেখা গেছে, আকার ভেদে বিদেশ থেকে একেকটি এসি আমদানি হয়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৫৫ ডলারে।

প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৫ গুণ কম। অথচ এসির একেকটি কম্প্রেসারের প্রকৃত মূল্যই প্রায় ৪০ ডলার।

৫০ ডলার দাম দেখিয়ে একটি এসি আমদানিতে ১৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও এর মূল্য দাঁড়ায় ১২৫ ডলার বা দশ হাজার টাকা।

শুল্ক দিতে হয় ৭৫ ডলার বা ৬ হাজার টাকা। অন্যদিকে দেশে তৈরি একটি এসিতে কাঁচামাল প্রয়োজন হয় ২০ হাজার টাকার। তাদের শুল্ক দিতে হয় ৫০ শতাংশেরও বেশি। ৫০ শতাংশ হারে শুল্কায়ন করলেও দেশিয় উদ্যোক্তাদের শুল্ক দিতে হয় কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। অর্থ্যাৎ দেশে তৈরি পণ্য থেকেই সরকার বেশি রাজস্ব পাচ্ছে।

বর্তমানে ফ্রিজ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ন। আর তাই ফ্রিজ আমদানি নিরুৎসাহিত করে এক্ষেত্রে সম্পুরক শুল্ক বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এসি, মোটরসাইকেল ও টিভি তৈরির উৎপাদন ক্ষমতাও দেশের চাহিদার সমপরিমাণ। বর্তমানে বিশ্বের ১৯ টি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা নিয়ে এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে। এবছরের মধ্যে ৫০টি দেশে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা।

এ ধরনের উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য দেশে তৈরি হওয়ায় দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনবল। ভ্যালু এডিশন হচ্ছে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। জিডিপিতে অবদান রাখছে। একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে রফতানি করে আয় হচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশিয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন খুব শিগগিরই বাংলাদেশে ফ্রিজের কম্প্রেসার ও মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন তৈরির কারখানা করতে যাচ্ছে।

এজন্য তারা সরকারের পলিসি বা নীতিগত সমর্থন দাবি করেছে। এদুটি কারখানা হলে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

কোম্পানিটি বছরে নূন্যতম ১০ লাখ কম্প্রেসার এবং ৩ লাখ মোটরসাইকেল ইঞ্জিন তৈরি করবে। চলতি মাসেই তাদের আরেকটি ফ্রিজ ফ্যাক্টরি উৎপাদনে যাবে, যার প্রায় পুরোটাই হবে রফতানির জন্য।

কিন্তু বাজেটে দেশিয় শিল্প বিকাশে ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন না থাকলে এ ধরনের বিনিয়োগ ঝুঁিকপূর্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবেন। এতে করে দেশ আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে।

বিদেশি পণ্যের বাজারে পরিনত হবে দেশে।

বাংলাদেশকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের ডাম্পিং স্টেশন বানাতে চায় বলে একটি ধারনা ব্যাপকভাবে কাজ করে বিপণন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে।

এজন্য তারা শিল্পোন্নত দেশগুলোর পথ অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত মোটরসাইকেল আমদানির উপর ১৫২ শতাংশ এবং থাইল্যান্ড ১৫৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

জাপান যখন নিজেরা মোটরগাড়ি তৈরি শুরু করে তখন সেদেশে আইন করে মোটরকার আমদানি বন্ধ করা হয়। আর তাই দেশের স্বার্থে এ ধরনের শিল্প বিকাশে সরকারকেই নীতিগত সহায়তা নিয়ে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, সরকারের উচিত ফিনিশড প্রোডাক্টের উপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো। তবে দেশিয় শিল্পের স্বার্থের বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। ট্যারিফ কমিশনের বিষয়টি শোনা উচিত। সেইসঙ্গে অবশ্যই ভারি শিল্পে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।

বাংলাদেশ রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশে ফ্রিজের উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ লাখ। যা দেশের চাহিদার দ্বিগুণ। এ খাতে আরও নতুন উদ্যোক্তা বিনিয়োগে আগ্রহী। এ অবস্থায় বাজেটে এখনই কাঁচামালের শুল্কহ্রাস এবং আমদানি নিরুৎসাহিত করা জরুরী।

অর্থ বাণিজ্য