ঠিকঠাক সেদ্ধ স্টেক আর সঙ্গে টমেটো কেচাপ খেতে পছন্দ করেন, এমন মানুষের জন্য ঐতিহাসিক বৈঠকের পর দুপুরের খাবারের মেন্যু ছিল যথেষ্টই জটিল।
মধু আর লেবুর রস দিয়ে কাঁচা আমের ‘কেরাবু’ আর অক্টোপাস, শসার ভেতর পুর দেয়া কোরীয় খাবার ‘ওইসেয়ন’, এশীয় সবজি দিয়ে কড মাছের পদ ‘দেয়গু জরিম’।
এমন বহু শব্দের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনোদিন পরিচয় হয়নি, ফলে স্বাভাবিকভাবেই টুইটারে তার অনুসারীদের অবস্থা হচ্ছিল মুহুর্মুহু আক্কেলগুড়ুম হওয়ার মতো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মেন্যুজুড়ে বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গে কূটনীতিটাও ছিল।
খাবার নিয়ে এমনকি অনেক কোরীয় জনগণও প্রশ্ন তুলেছেন, কারণ মেন্যুতে এমন অনেক কিছুই দেখা গেছে, যা কোরীয়দের রোজকার খাদ্যতালিকায় থাকে না।
যেমন- শসার মধ্যে গরুর মাংস, ডিম আর গাজর ভরে দিয়ে বানানো ‘ওইসেয়ন’ কোরিয়ায় ত্রয়োদশ থেকে প্রায় উনিশ শতকের আগ পর্যন্ত শাসন করা জোসেয়ন সাম্রাজ্যের সময়কার প্রচলিত খাবার।
এ খাবারটি সাধারণত কোরিয় রাজপরিবারের মেন্যুতে থাকে। ফলে খাবারটি অত প্রচলিত নয় এখন।
কেউ কেউ বলছেন, কোরিয়ায় জনপ্রিয় খাবার ‘ওইসোবাগি’র সঙ্গে হয়তো নাম বিভ্রাটের কারণে এমনটি ঘটেছে।
তবে, সিদ্ধ মাংস, মাছ আর সবজি দিয়ে বানানো মেন্যুর অন্য আইটেম ‘দেয়গু জরিম’ কোরিয়াতে বেশ প্রচলিত খাবার।
কিন্তু যখন দেখা গেল যে, পিয়ংইয়ং ঠাণ্ডা নুডলস মেন্যুতে নেই, তখন বোঝা যায় যে সিঙ্গাপুর কিমকে স্বস্তি দিতে চেষ্টার কমতি রাখেনি।
আর জ্ঞানী ও সতর্ক কূটনীতিকের মতো আয়োজকরা ট্রাম্পকেও বঞ্চিত করেনি।
এমন ভাবেই মেন্যু ঠিক করা হয়েছিল যে, খেতে খেতে যে কেউ চাইলেই ভাবতে পারে, যে আশির দশকের নিউইয়র্কের কোনো রেস্তরাঁয় বসে খাচ্ছেন।
স্টার্টার হিসেবে খাবারের শুরুতেই পরিবেশন করা হয়, অ্যাভোকাডো সালাদের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী চিংড়ি ককটেইল। এর পর মেইন কোর্সে ছিল সেদ্ধ আলু আর ব্রকলি দিয়ে বিফ শর্ট রিব কনফিট। আর ডেজার্ট বা মিষ্টান্ন হিসেবে ছিল ‘হাগেন-দাস’।
যারা ভাবছেন, বিফ শর্ট রিব ট্রাম্পের জন্য বানানো হয়েছে কিনা, তারা ভুল ভাবছেন, কারণ এটা পরিবেশন করা হয়েছে রেড ওয়াইন সস সহযোগে।
আর ট্রাম্প তো কোনো ধরনেরই মদ্যপান করেন না।
তবে মেন্যুতে থাকা ইয়াংঝৌ ফ্রায়েড রাইস হয়ত নিঃশব্দে চীনকে ধন্যবাদ জানানোর একটি চেষ্টা।
এ ধরনের ফ্রায়েড রাইস মার্কিন মুলুকের চীনা রেস্তোরাঁতে পরিবেশন হয়ে থাকে। এটি দিয়ে হয়ত বোঝানো হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এক ধররেন সমঝোতায় পৌঁছাতে হয়েছে।
মেন্যুর অন্য পদ কাঁচা আমের ‘কেরাবু’ মূলত মালয় খাবার। সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী চীনা, ভারতীয় আর মালয় ধরনের খাবারের সংমিশ্রণ ছিল মেন্যুতে।
বিশেষত দেশটির চীনা খাবারের বৈশিষ্ট্যমতো টক মিষ্টির ব্যবহার ছিল কয়েকটি পদে।
এ খাবারের মেন্যুর মূল বার্তাটি ছিল হয়তো এ বৈঠকের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকেই স্মরণ করা-যেমন যুক্তরাষ্ট্র আর পশ্চিমা দেশগুলোর খাবার যেমন রয়েছে, তেমনি আছে কোরিয়া, চীন আর সিঙ্গাপুরের নিজস্ব স্বাদের খাবারও।
এখানে জাপান আর রাশিয়া কিছুটা পেছনে পড়ে রইল, কিন্তু কূটনীতির মূল ব্যপারটাই তো যারা মূল খেলোয়াড় তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া।