চলমান মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি যখন ধরি, ভালো করেই ধরি। মাদকের কোনো গডফাদারই ছাড় পাবে না। সে যে বাহিনীরই হোক না কেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে শুরুতেই মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলেন।
ভারত সফর সম্পর্কে অবহিত করতে আজ বুধবার বিকেল চারটার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, এ অভিযানে এ পর্যন্ত ১০ হাজারের ওপর গ্রেপ্তার হয়েছে। কোন পত্রিকায় কত গ্রেপ্তার হয়, তা বলা হয় না।
মাদকের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের কারণে সমাজে আজ হাহাকার বইছে। মাদকের কারণে ছেলের হাতে বাবা, মেয়ের হাতে মা খুন হচ্ছেন। মাদক নিয়ে মিডিয়ায়ও তো তোলপাড়। তাহলে আজ অভিযান নিয়ে কেন এমন বিরোধিতা হচ্ছে। অভিযানে কোনো নিরীহ মানুষ মরছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। আত্মরক্ষার অধিকার সবারই আছে। এমন পরিস্থিতিতে বন্দুকযুদ্ধে কেউ মারা গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীরই বা কি করার আছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চলার সময়েই অনেকে বিরোধিতা করেছিলেন। সমালোচনা করেছিলেন। সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারাই পত্র-পত্রিকায় লিখেছেন এই মাদকের বিরুদ্ধে। কোনটা চান? অভিযানটা চলুক না বন্ধ হয়ে যাক? ১০ হাজারের ওপর এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে। মাদক যারা পাচার করে তাদের ধরতে গিয়ে অনেক সময় অনেক কিছু ঘটতে পারে। আইনগত দিক থেকে এটা ঠিক না, কিন্তু একটা অপারেশনে গেলে তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যু ও তিস্তা পানি চুক্তি প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নিয়ে, সব কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এবার আমি গিয়েছি বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করতে। তাই সেটিকেই জোর দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আশ্বাস দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য যথেষ্ট রিলিফ পাঠিয়েছে ভারত।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারতে দুই দিনের সরকারি সফর শেষে গত শনিবার রাতে দেশে ফিরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট শনিবার রাত ১০ টা ৩৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করে।
সফরে প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার সম্মানিত অতিথি হিসেবে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেন এবং আজ পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি শান্তিনিকেতনে সদ্য নির্মিত বাংলাদেশ ভবনের যৌথভাবে উদ্বোধন করেন এবং সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন এবং দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
শেখ হাসিনা গতকাল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাসভবন ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি’ পরিদর্শন করেন। কলকাতা চেম্বার নেতারা তাঁর সঙ্গে হোটেল কক্ষে সাক্ষাৎ করেন।
শেখ হাসিনা ভারতের মহান জাতীয়তাবাদী নেতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জাদুঘর পরিদর্শন করেন।