রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা প্রদর্শন করে সাহসী ও বীরোচিত কাজের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে আজ রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা করি, আপনারা (জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরতারা) আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সমুন্নত রাখার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবেন।’
রাষ্ট্রপতি অন্যান্য দেশের শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদেরও আইটি ও কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতি এবং দ্বিপক্ষীয় ও বহুমুখী কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে শান্তিরক্ষীরা বিরাট অবদান রাখছে।’
১৯৭৪ সালেঠ ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, যেখানে তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর দৃঢ় আকাংখা ব্যক্ত করেছিলেন সে প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘তখন থেকেই বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন শান্তিপ্রিয় ও বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ বর্তমানে অন্যতম বৃহৎ সৈন্য প্রেরণকারী দেশÑ এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা ৪০টি দেশে ৫৪টি মিশনে অত্যন্ত সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত ১২৪টি দেশের ৯১ হাজার ৫৮ জন শান্তি রক্ষীর মধ্যে ৭ হাজার ৭৫ জন বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী রয়েছেÑ যা সত্যিই গর্ব করার বিষয়।
বর্তমানে ১০টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘ সম্প্রতি মহিলা প্রতিনিধিত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ১৫৭ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
বক্তব্যের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে কর্মরত অবস্থায় শহীদ হওয়ায় বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শান্তিক্ষী মিশনে দায়িত্ব পালনকালে আহতদের প্রতিও যথাযথ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
রাষ্ট্রপতি মিশনে দায়িত্ব পালনকালে শহীদ ১০ জন শান্তিরক্ষীর পরিবারকে ও অপর ১১ জন আহত শান্তিরক্ষীকে পুরস্কার প্রদান করেন। পরে তিনি মালে, কঙ্গো ও লেবাননে কর্মরত শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন এবং বিভিন্ন মিশনে থাকা শান্তিরক্ষীদের কল্যাণ কামনা করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ সময় সুস্পষ্টভাবে শান্তিরক্ষীদের প্রতি তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে তাদের সামগ্রিক কর্মকান্ডের সাফল্য বজায় রাখার আহ্বান জানান।
এর আগে আবদুল হামিদ বিভিন্ন জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের ওপর নির্মিত একটি স্বল্প্যদৈর্ঘ প্রামাণ্য চিত্র প্রত্যক্ষ করেন। পরে রাষ্ট্রপতি একটি বুকস্টল এবং জাতিসংঘ মিশনে ব্যবহৃত শান্তিরক্ষীদের ‘মডেল অস্ত্রের’ একটি স্টলসহ কতিপয় সুসজ্জিত স্টল ঘুরে দেখেন।
রাষ্ট্রপতি ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর উপলক্ষে একটি বিশেষ ডাক টিকিট অবমুক্ত করেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি, সর্বাপেক্ষা সিনিয়র শান্তিরক্ষী ও সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ শফিউল হক এবং জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সিপ্পো অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, কূটনৈতিক কোরের সদস্যগণ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহম্মেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল আবু এরশার, সংসদ সদস্যগণ (এমপি), পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং রাষ্ট্রপতির সচিবগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাসস।