সাংবাদিক বিভাসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দুপুরে

সাংবাদিক বিভাসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দুপুরে

বাসচাপায় নিহত ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার বিভাস চন্দ্র সাহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে শনিবার দুপুরে।

শুক্রবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ডিএমসি) তার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে সেখানকার শবাগারে রাখা হয়েছে।

ডিএমসির ফরেনসিক বিভাগের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান  বিভাস চন্দ্র সাহার মরদেহ  ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন।

এদিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাইদের নির্দেশে ধানমন্ডি থানার এসআই খালিদ মনসুর সুরুতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।

শনিবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) বিভাস চন্দ্র সাহাকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। দুপুরের পর রাজারবাগ শশ্মানঘাটে নিহতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) এ দুর্ঘটনার প্রতিবাদে, এর জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এবং নিহত বিভাস স্মরণে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কালোব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এদিকে শুক্রবার রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডির পপুলার হাসপাতালে দুর্ঘটনার পর পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ নিয়ে বিভাসের সহকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের বাকবিতণ্ডা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকরা পুলিশের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলে এরও বিচার দাবি করেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় ধানমণ্ডির ২ নম্বর রোডের স্টার কাবাবের সামনের রাস্তায় বাসচাপায় নিহত হন সাংবাদিক বিভাস চন্দ্র সাহা।

মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার সময় মৈত্রী পরিবহনের একটি বাস তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে
ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। নারায়ণগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরগামী মৈত্রী পরিবহনের নম্বর- ঢাকা মেট্রো ব ১৪-০৪২২।

দুর্ঘটনার পর নিহত বিভাসের মরদেহ ধানমণ্ডি মডেল থানার পাশে পপুলার হাসপাতালে রাখা হলে সেখানে নিহত সাংবাদিক বিভাসের আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও সাংবাদিকরা ভিড় জমান। তাদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।

এক পর্যায়ে দুর্ঘটনার বেশ পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে, বিভাসের লাশ ততোক্ষণ রাস্তায় পড়েছিল এবং পুলিশ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছে- এ অভিযোগে সাংবাদিকরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও ধাওয়াধাওয়ির ঘটনা ঘটে। সাংবাদিকদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের মারধর করেছে।

ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসেসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) হাসপাতাল চত্ত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে শনিবার সকাল ১১টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কালোব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
এ সময় ক্র্যাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান লাবলু ও সাধারণ সম্পাদক ইশারফ হোসেন ইসা এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ও হাসপাতালে সাংবাদিকদের মারধরকারী পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে রাত আটটায় ময়নাতদন্তের জন্য বিভাসের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে সেখানে আসেন পুলিশের আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, র্যাবের মহাপরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান ও ডিএমপির কমিশনার বেনজীর আহমেদ।

বিভাসের মরদেহ দেখে বের হয়ে আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে বিভাসকে চিনি। তিনি আমার ছোট ভাইয়ের মতো। তার মৃত্যুতে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়র প্রয়োজন তা নিতে আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। বিভাসকে আমরা ফিরে পাবো না। তবে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের যদি আমরা আইনের আওতায় আনতে পারি, তাহলে এর পুনরাবৃত্তি রোধ হবে।’

পুলিশের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, এ অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। যদি কোনো পুলিশ সদস্য এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন, তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র্যাবের মহাপরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘যতো দ্রুত সম্ভব আমরা চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ট্রাফিক আইনে যে সব সমস্যা আছে তা সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করবো।’

এ সময় ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, একের পর এক সাংবাদিক সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। বাস চাপা দিয়ে মানুষ মারাটাও এক ধরনের হত্যা। অথচ এদের সাজা হয় মাত্র দুই বছর। ট্রাফিক আইন সংশোধন করার জন্য বার বার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বে এখনো আইন সংশোধন করছেন না।’

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক।

এর আগে দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা মৈত্রী পরিবহনের বাসটি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়। পুলিশের সঙ্গে সেখানে জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। জনতা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।

এর আগে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে নিহত হন বরিশাল থেকে আসা দৈনিক মতবাদের  ফটো সাংবাদিক শহীদুজ্জামান টিটু (৩৮)।

নিহত বিভাস জামালপুরের কোতোয়ালি থানার ভোকেশনাল মোড় গ্রামের ইন্দ্র ভূষণ সাহার পুত্র। বিভাসরা ৩ ভাই ৩ বোন। এর মধ্যে তার বড় দুই ভাই ও এক বোন আগেই মারা গেছেন। তিনি আর দুই বোন জীবিত ছিলেন। বিভাস মারা যাবার পর মাত্র দুই বোন রইলেন। এ নিয়ে তার এলাকায় ও পরিবারে শোকের মাতম চলছে।

স্ত্রী তপতী সাহাকে নিয়ে বিভাস উত্তর শাহজাহানপুরে থাকতেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার সংবাদপত্রে ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন।

এ বিষয়ে কর্তব্যরত সার্জেন্ট আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমরা চালককে গ্রেফতার করতে পারিনি। কারণ, এখানকার বিক্ষুব্ধ জনতাকে সামাল দেওয়ার আগেই চালক পালিয়ে যায়। তবে হেলপার সজল (২৮) ও বাসটি আটক করে ধানমণ্ডি থানায় রাখা হয়েছে। ’

প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ মুক্তার আহমেদ বলেন, উনি (বিভাস) মোটরসাইকেলে করে রাস্তার ধার দিয়ে যাচ্ছিলেন। মৈত্রী পরিবহনের বাসটি পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দেয়। তিনি জানান, চালক চাইলে তাকে বাঁচাতে পারতেন। ধাক্কা খেয়ে তিনি রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর বাসের চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে যায়। চালক ব্রেক করলে তিনি বেঁচে যেতেন।

একই কথা জানান প্রত্যক্ষদর্শী নির্মাণ শ্রমিক আখতার হোসেন। তিনি বলেন, মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশ দিয়ে এগোনোর সময় বাসটি পেছন থেকে ধাক্কা দিলে তিনি (বিভাস) ৪/৫ গজ সামনে ছিটকে পড়ে যান। এ সময় পালাতে গিয়ে বাসটি তার মাথা পিষে দিয়ে যায়।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শামীম অভিযোগ করেন, ঘটনার আধা ঘণ্টা পরে পুলিশ এসেছে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

বাংলাদেশ