রেলের কালো বেড়ালটি দেখতে চান সুরঞ্জিত

রেলের কালো বেড়ালটি দেখতে চান সুরঞ্জিত

নতুন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলওয়ের লোকসানের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, পৃথিবীর কোথাও রেলখাত লোকসানে নেই। একমাত্র বাংলাদেশেই এটি লোকসানে রয়েছে। আমি দেখতে চাই সমস্যাটা কোথায়? কোন অন্ধকারে কালো বেড়ালটি কীভাবে লুকিয়ে রয়েছে।

সেইসঙ্গে তিনি সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে রেলকে আলাদা করার সিদ্ধান্তকে একটি গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, গণমুখী ও সাহসী সিদ্ধান্ত বলেও উল্লেখ করেছেন।

সোমবার সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সুরঞ্জিত বলেন, ‘বিভিন্ন দাতা সংস্থা যেমন বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি তাদের সব টাকা সড়কে দেয়। রেলে দেয় না। মন্ত্রণালয় আলাদা করায় রেলের পুনর্জীবন ঘটেছে।’

এর আগে নতুন এ মন্ত্রী বলেন, ‘এ যাবৎ রেলই সবচেয়ে দ্রুতগতির বাহন। যদিও উড়োজাহাজ সেটিকে টেকঅফ করার চেষ্টা করছে। তারপরেও ট্রেনই সবচেয়ে সুলভ। এক সময় আমাদের দেশেও রেলের জন্য আলাদা বাজেট হতো। কিন্তু মাঝপথে অটোমোবাইল এসে আধিপত্য বিস্তার করায় এটি টিকতে পারলো না।’

তিনি বলেন, ‘মিশুক মুনীর ও তারেক মাসুদের মৃত্যুর পরে সড়ক পথের উপর মানুষের একটা ভীতি তৈরি হয়েছে। মানুষ আবার রেলের দিকে ঝুঁকছে। মানুষের প্রতিক্রিয়া সরকার শুনেছে। এটাই স্বাভাবিক। গণতান্ত্রিক সরকার রেলকে সড়কের সাথে ঢুকিয়ে দেয়নি।’

রেলমন্ত্রী নিজের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে সুরঞ্জিত বলেন, ‘সময় আছে দুই বছর। সব পারবো এমন নয়। প্রধানমন্ত্রী যে বিশ্বাসে দায়িত্ব দিয়েছেন- আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট। যতটুকু সম্ভব সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করবো।’

সুরঞ্জিত বলেন, ‘ট্রেন যাতে সময়মতো চলে সেটি আগে করার চেষ্টা করবো। এটা আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ। এই কাজটি করলে মানুষ একটি বিশাল সেবা পাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ ট্রেনগুলো যাতে পরিচ্ছন্ন থাকে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলো জনগণের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবো।’

টিকিট নিয়ে ভোগান্তি বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সকল টিকিটই ই-টিকিট করা যায় কি-না সে ব্যাপারে আমি চেষ্টা করবো। যাকে আপনারা (সংবাদিক) টিকিটের ডিজিটাইজেশন বলতে পারেন। এটি করতে পারলে ভোগান্তি অনেক কমে যাবে।’

মিটারগেজ লাইনকে ব্রডগেজ ও ব্রডগেজকে ইলেকট্রিক লাইনে নিয়ে আসাকেও তিনি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন।

সুরঞ্জিত বলেন, ‘এসব কাজ করার জন্য বিশাল ফান্ড লাগবে এমন নয়। আমি মনে করি ট্রেনের বিকল্প একমাত্র ট্রেন।’

ঢাকার যানজটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যানজট একটি অন্যতম সমস্যা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা- জয়দেবপুর রুটের ট্রেন সময়মতো চলাচল করলে এই সমস্যা অনেক দূর হবে।’

যাতায়াত ব্যবস্থায় ট্রেন একটি শক্তিশালী মাধ্যম উল্লেখ করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘এটিকে আধুনিক করতে হলে পথ ও ভাড়ার বৈষম্য দূর করতে হবে। এটিকে আরও বেশি সার্ভিস ওরিয়েন্টেড করতে হলে জনগণকেও কন্ট্রিবিউশন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বাসে যেতে কত টাকা দেন, আর কত সময় লাগে সেটিও ভেবে দেখতে হবে।’

রেলওয়ের দখলে থাকা জমি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জমিদারি ব্যবস্থা চলে গিয়েছে ঠিকই। তবে সবেচেয়ে বড় জমিদার হচ্ছে রেলওয়ে। এই জমি উদ্ধার করাতে আমি আইনগত সংস্কারের চেষ্টা করবো।’

বিভিন্ন সময়ে দাতা সংস্থাগুলোর পরামর্শে বাংলাদেশের রেলওয়েকে দুর্বল করে রাখা হয়েছে নতুন মন্ত্রী হিসেবে আপনি কী করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন প্রধানমন্ত্রী যখন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমার মনে হয়েছে উনি গভীর হোমওয়ার্ক করেছেন। ভেবে চিন্তে উনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন মন্ত্রণালয় করার ফলে কারা বেজার হবে এটাও ভাবতে হয়েছে।’

দাতা সংস্থা নিয়ে সরসারি নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে সুরঞ্জিত বলেন, ‘আমরা যখন সমস্যার কথা বলি তখন মৌলিক সমস্যটা এড়িয়ে যাই। এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রতিক্রিয়া পরাজিত করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

নতুন মন্ত্রণালয় গঠন সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আলাদা মন্ত্রণালয় করার ফলে এখন সড়ক ও সেতুর সাথে প্রতিযোগিতা করার প্রয়োজন হবে না।’

এদিকে, মন্ত্রী হওয়ার পরও সরকারের বিভিন্ন কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করে যাবেন বলে জানিয়েছেন নতুন রেলমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলেছি। মন্ত্রী হওয়ার পরও আমার কথা বলার অধিকার রয়েছে। গঠনমূলক সমালোচনাকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি উৎসাহিত করে।

সুরঞ্জিত বলেন, ‘আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি কথা বলেছি। মন্ত্রী হওয়ার পরেও কথা বলবো। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে যদি কোনও অনুষ্ঠানে যাই তাহলে কি কথা বলবো না?’

সম্প্রতি মন্ত্রিসভার রদবদল ও সংযোজেনর পরে আর কোনও সংযোজনের প্রয়োজন আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, ‘এখন যেটি হলো সেটির মধ্যে কি কোনও সিগন্যাল দেখতে পাননি? একটি গণতান্ত্রিক সরকার যা করে বর্তমান সরকারও তাই করেছে।’

প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যে বিশেষ করে শরৎ সাহিত্যে রেঙ্গুন যাত্রা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও গেছেন। চমক যদি দেখতে চান তবে অপেক্ষা করাই ভালো।’

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর