পদ্মা সেতু মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ মাসেই চূড়ান্ত চুক্তি: যোগাযোগমন্ত্রী

পদ্মা সেতু মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ মাসেই চূড়ান্ত চুক্তি: যোগাযোগমন্ত্রী

পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে এ মাসের শেষ নাগাদ মালোয়েশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি হবে বলে জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সমঝোতা স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে পদ্মা সেতু হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিরোধে যেতে চাই না।“

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রী নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

এর আগে ঢাকাস্থ ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত (ডেপুটি) হাইকমিশনার সঞ্জয় ভট্টচার্য যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে আখাউড়া-আগরতলা রেল লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত্র বিষয়ে আলোচনা করেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বব্যাংকের অপেক্ষায় নষ্ট করার মতো সময় নেই সরকারের হাতে। প্রয়োজনে বিশ্বব্যাংক দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।“

পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়মের প্রমাণ বিশ্বব্যাংক সরকারকে দিয়েছে বলে তার দুষ্টি আকর্ষণ করা হলে জবাবে মন্ত্রী আরো বলেন, “অভিযোগ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বিশ্বব্যাংক আরো তদন্ত করতে পারে।“

সরকার বিশ্বব্যাংকের তদন্তের সব ধরণের সুযোগ করে দিয়েছে উল্লেখ করে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “দুদক তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পায়নি। দুদকের তদন্ত ছাড়াও ইচ্ছে করলে তারা তদন্ত করতে পারে।“

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো তারা কেউ এ প্রকল্পের সঙ্গে এখন নেই উল্লেখ করে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “আগের যোগযোগমন্ত্রীকে সরকার সরিয়ে দিয়েছে, প্রকল্প পরিচালক, সেক্রেটারি কেউ এখানে নেই।“

বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “লাভালিন হচ্ছে পাঁচটি শর্ট লিস্টের একটি। আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে তাদের প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ওই দেশেও (নিজ দেশে) অভিযোগ রয়েছে। আমরা পাঁচিটি পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করেছি। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক বিশ্বব্যাংক।“

বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি প্রতিরোধ সংক্রান্ত সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির প্রতিবেদন দেন। এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। গত ১৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোল্ডস্টেইন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির পুনঃতদন্ত করতে অনুরোধ জানান বাংলাদেশকে।

উল্লেখ্য, ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ২৯০ কোটি ডলার, এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা। বাকি অর্থের যোগান দেবে সরকার। তবে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়ন স্থগিত করে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন স্থগিতের পর সরকার বিকল্প খুঁজতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় মালোয়েশিয়া অর্থায়ানের আগ্রহ দেখায়। সরকার তাদের মেয়াদকালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়।

আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগ শিগগিরই
ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত (ডেপুটি) হাই কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “শিগগিরই আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগ শুরু হচ্ছে। রেললাইন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে সমঝোতা সই হবে।“

লোকোমোটিভ আনা হবে ২৬টি
যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, “ব্রডগেজ লাইনের জন্য ভারত থেকে প্রতিমাসে দুটো করে পাঁচ মাসে ১০টি লোকোমোটিভ আনা হবে। পর্যায়ক্রমে আরো ১৬টি আনা হবে। আগামী মাস থেকেই লোকমোটিভ আনা শুরু হবে।“

ডুয়েল গেজ ট্র্যাক ও দ্বিতল বাস
ভারত থেকে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক আনা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এছাড়া ৩৩টি দ্বিতল বাস আনা হয়েছে। এগুলো প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “আরো একশটি এসি বাস আনা হবে। আর আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আর্টিকুলেট বাস আনা হবে।“ ট্র্যাক আনার বিষয়ে ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ তাদের আগ্রহে সাড়া দিয়েছে।’

বাংলাদেশ