এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জোরদার ও বিকাশের লক্ষ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক মিডিয়া স্যাটেলাইট স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর রুপসী বাংলা হোটেলে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিকাশ বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের (সিডিএমএফ) কারিগরি সেশনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা এ প্রস্তাব করেন।
প্রস্তাবটি বাংলাদেশের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমদ প্রথমে উপস্থাপন করেন।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা আরো প্রস্তাব করেন, ইউরো স্যাটেলাইটের আদলে এটি করা যেতে পারে। যার আওতায় এশিয়া-প্যাসিফিক ভার্চুয়াল ইউনিভার্সিটি চলবে। এতে করে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়বে বলেও তারা মনে করেন।
কারিগরি সেশনের সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার বক্তব্যে বলেন, যে কোনো দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য তিনটি বিষয় জরুরি। এগুলো হচ্ছে, দেশপ্রেম, নৈতিকতা ও পরিসংখ্যান। উন্নয়ন প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে প্রত্যেকের জীবনে এই তিনটি গুণ থাকা দরকার।
এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের লক্ষ্যে একটি প্লাটফরম গঠনেরও আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঞ্চালনায় এ সেশনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ইউনেস্কো আয়োজিত তিনদিনের এ সম্মেলন বুধবার সকালে শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
চীন, আফগানিস্তান, ভুটান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরিবাতি, লাওস, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, কোরিয়া, পালাউ, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, তিমুর, থাইল্যান্ড, টোঙ্গা, ভিয়েতনাম, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, মার্শাল আইল্যান্ডস, ব্রুনেই দারুস সালাম, কম্বোডিয়া, কুক আইল্যান্ডস, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, তুভালু ও ভানুয়াতুর প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
সম্মেলনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিকাশের ওপর ছয়টি সেমিনার হবে। রোববার ‘ঢাকা ঘোষণার’ মধ্য দিয়ে শেষ হবে সম্মেলন।
প্রথম কারিগরি সেশনে ইমতিয়াজ আহমদ প্রস্তাব করে বলেন, এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে একটি মিডিয়া স্যাটেলাইট স্থাপন করা যেতে পারে। এছাড়া আমাদের সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য একটি শিক্ষা ও মিডিয়া স্যাটেলাইট আমরা করতে পারে। এতে করে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ বাড়বে।’
অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা সমর্থন ইমতিয়াজের ওই প্রস্তাব করেন।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আমাদের আরো আন্তরিক হতে হবে। এ ধরনের যোগাযোগ নিজেদের উন্নয়নের জন্য জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘দেশের সাংস্কৃতিক ও কৃষ্টি লালন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব সময় সজাগ। আমরা সব সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়ে থাকি।’
মূল্য বক্তব্যে আবুল বারকাত বলেন, আঞ্চলিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সাংস্কৃতিক যোগাযোগের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যা বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
উল্লেখ্য, বিশ্বের সব জাতির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিকাশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ইউনেস্কো ২০০৫ সালে ‘Convention on the Protection and Promotion of the Diversity of Cultural Expressions 2005’ শীর্ষক কনভেনশন গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ২০০৭ সালে কনভেনশনটিতে অনুস্বাক্ষর করে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২৩টি দেশ এ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেছে।
কনভেনশনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর অনুস্বাক্ষরের হার কম। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের ৪৪টি দেশের মধ্যে মাত্র ১২টি দেশ কনভেনশনটিতে অনুস্বাক্ষর করেছে। কনভেনশনে প্রথম দিকে অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কনভেনশনে এ অঞ্চলের অন্যসব দেশকে অনুস্বাক্ষরে উৎসাহিত করতে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।