আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে সারা বিশ্ব থেকে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা এখন ভিড় জমিয়েছেন জার্মানির অন্যতম প্রধান শহর বনে। সোমবার এখানেই শুরু হয়েছে আফগানিস্তান বিষয়ক আর্ন্তজাতিক সম্মেলন।
কিন্তু আফগানিস্তানে ক্ষমতার রাজনীতির অপরিহার্য অংশ তালেবান এবং দেশটির স্থিতিশীলতার প্রশ্নে সবচে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার পাকিস্তানের অনুপস্থিতিতে এই সম্মেলন থেকে কী অর্জন সম্ভব সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
বিভিন্ন দেশ থেকে শতাধিক প্রতিনিধি এবং সহায়তা সংগঠন সোমবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর সালেহিসহ বিশ্বের অনেক উচ্চপদস্থ কর্তা ব্যক্তি অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
এই বন শহরেই এক দশক আগে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে হামিদ কারজাইকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসানো হয়। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে ২০০১ সালে আফগানিস্তান আক্রমণ করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাবুলের শাসন ক্ষমতা থেকে তৎকালীন তালেবান সরকারকে হটিয়ে হামিদ কারজাইকে প্রেসিডেন্ট পদে বসানো হয়।
কিন্তু আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। আফগানিস্তানে দিন দিন তাদের প্রভাব বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে তালেবান নেতারা এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ প্রত্যাখান করেছে।
এই সম্মেলন আফগানিস্তানে দখলদারি অব্যাহত রাখার জন্য পশ্চিমাদের নতুন কোনও চাল বলে আখ্যা দিয়েছে তারা।
এদিকে ন্যাটোর বিমান হামলায় পাক-আফগান সীমান্তে গত সপ্তাহে ২৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হওয়ার প্রতিবাদে পাকিস্তানও এই সম্মেলনে এখনও পর্যন্ত অংশ নেয়নি।
তবে পাকিস্তান সম্মেলনে অংশ নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে বলে সোমবার পাক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কথায় সাড়া দিয়ে তালেবান আফগানিস্তান বিষয়ক কোনও আলোচনায় অংশ নিতে রাজি হতে পারে। পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই বিশ্লেষকরা এ ধারণা করেন।
কিন্তু আফগান সংকটের সঙ্গে জড়িত এই দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এতে প্রত্যাশিত ফল অর্জন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খোদ আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষেরা।
এদেরই একজন কাবুলের অধিবাসী ফজল রহিম (৩৭) বলেছেন, আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার এবং তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীদের উচিৎ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য তালেবানকে উৎসাহিত করা। কারণ তারা এই দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া বন সম্মেলন আফগানিস্তানের জন্য সত্যিকারের আশাবাদ বয়ে আনবে না।
কাবুলে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত শেরার্ড কুপার কোলসও তালেবানদের অনুপস্থিতিতে বন সম্মেলনকে অর্থহীন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন বলে অভিহিত করেছেন।