বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য সব সংস্কৃতির মানুষকে নিজেদের ঐতিহ্য ভাগাভাগি করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সকালে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিকাশ বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের (সিডিএমএফ) উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, আমরা একে অপরের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ভাগাভাগি করি। কারণ এসব ঐতিহ্যই পারে সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভাষা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য প্রকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহন। আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে, আমাদের জাতীয়তার উন্মেষ ঘটেছে ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করায় আমি ইউনেস্কোর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সারা বিশ্বের সব মাতৃভাষা রক্ষার জন্য প্রতি বছর এই দিবস পালিত হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা জানান, সংবিধান অনুযায়ী জনগণের অর্থনৈতিক এবং নান্দনিক বিকাশের জন্য আধুনিক বা ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিগুলো চিহ্নিতকরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার অন্য দেশগুলোকেও এই সনদে সই করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের সব জাতির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিকাশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ইউনেস্কো ২০০৫ সালে ‘Convention on the Protection and Promotion of the Diversity of Cultural Expressions 2005’ শীর্ষক কনভেনশন গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ২০০৭ সালে কনভেনশনটিতে অনুস্বাক্ষর করে। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১২৩টি দেশ এ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করেছে।
কনভেনশনে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোর অনুস্বাক্ষরের হার কম। বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের ৪৪টি দেশের মধ্যে মাত্র ১২টি দেশ কনভেনশনটিতে অনুস্বাক্ষর করেছে। কনভেনশনে প্রথম দিকে অনুস্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কনভেনশনে এ অঞ্চলের অন্যসব দেশকে অনুস্বাক্ষরে উৎসাহিত করতে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছি। এতে দেখা গেছে, জামদানি অথবা নকশীকাথা, টাঙ্গাইল শাড়ি, মসলিন এবং বাউল বা সুফী গান এবং বিভিন্ন জাতিসত্তার জনগোষ্ঠির সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভূত অবদান রাখছে। আমি আশা করি, উন্নয়নশীল অন্য দেশগুলোও এ ধরনের সমীক্ষা পরিচালনার মাধ্যমে লাভবান হবে।’
এই সম্মেলন বাংলাদেশে আয়োজন করায় ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভাকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম। অন্যদের মধ্যে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা, রিপাবলিক অব কিরিবাতির ভাইস প্রেসিডেন্ট তেইমা ওনেইও, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
গারো সম্প্রদায়ের ‘হেডম্যান’ প্রমোদ মানকিন এ অনুষ্ঠানে আসেন নিজের সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে। তিনি বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে দাঁড়ালে সবাই করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা হয়তো একটু অবাক হচ্ছেন আমার পোশাক দেখে। এই পোশাক গারো হেডম্যানরা পড়েন।’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ইউনেস্কো আয়োজিত এ সম্মেলনে চীন, আফগানিস্তান, ভুটান, ইরান, কাজাখস্তান, কিরিবাতি, লাওস, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, কোরিয়া, পালাউ, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, তিমুর, থাইল্যান্ড, টোঙ্গা, ভিয়েতনাম, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, মার্শাল আইল্যান্ডস, ব্রুনেই দারুস সালাম, কম্বোডিয়া, কুক আইল্যান্ডস, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, তুভালু ও ভানুয়াতুর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।
সম্মেলনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিকাশের ওপর ছয়টি সেমিনার হবে। ১১ মে ‘ঢাকা ঘোষণার’ মধ্য দিয়ে শেষ হবে সম্মেলন।