মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার আহ্বান

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার আহ্বান

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন দলের নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে যেভাবে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করা হয়েছিল, তেমনি তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে।
তারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুই যেমন স্বাধীনতার মহানায়ক, তেমনি তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক।
নেতৃবৃন্দ বুধবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, এডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি, লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মির্জা আজম ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ যারা স্বীকার করে না, তারা প্রকারান্তরে মুক্তিযুদ্ধকেই মানে না।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর ৭ মার্চের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাজানোর জন্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে সেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ জাতিসংঘের ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে নিবন্ধিত হওয়া এখন এটি শুধু বাঙ্গালী জাতির নয়, সারা বিশ্বের সম্পদ।
কাদের আরো বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করে আমরা আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক আওয়ামী লীগের বিজয় ছিনিয়ে আনব।
আমির হোসেন আমু বলেন, বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো আমাদের দেশেও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। যে সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হয়, সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে।
১৯৭০ সালের নির্বাচন নিয়েও ষড়যন্ত্র হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র যেমন দেশের মানুষ মেনে নেয়নি, তেমনি আগামী নির্বাচন বানচালের কোন ষড়যন্ত্রকেও সহ্য করা হবে না।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের মাধ্যমে একটি জাতির জন্ম হয়েছিল। এ ভাষণ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সমগ্র জাতিকে একই মোহনায় নিয়ে এসেছিল। এ ভাষণ একটি নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণ ছিল আমাদের প্রেরণার শক্তি। যে প্রেরণাকে ধারণ করে আমরা জীবনকে তুচ্ছ ভেবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলাম।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন এবং এতিমের টাকা চুরি করে জেলে রয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৎ সরকার প্রধান হিসেবে বিশ্বের সরকার প্রধানদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নত জীবন যাপন করছে। তিনি আমাদের গর্বিত জাতির মুকুট উপহার দেবেন।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল চিহ্নকে মুছে ফেলার জন্য জাতির পিতা যে স্থানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন, সে স্থানে পরিকল্পিতভাবে শিশুপার্ক তৈরি করা হয়েছে।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বাঙ্গালী জাতির বিজয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্বাচন। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্যই যুদ্ধাপরাধের ও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে।
দুপুর আড়াইটায় আওয়ামী লীগের জনসভা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও সকাল এগারোটার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আওয়ামী লীগের জনসভাস্থল কানায় কানায় ভরে যায়। সকাল নয়টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা ওয়ার্ড থেকে দলীয় নেতা-কর্মীরা মিছিল সহকারে জনসভা স্থলে আসতে শুরু করে।
রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও সাভার ও ধামরাই থেকে আসা নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে। এতে ফার্মগেট থেকে বাংলামোটর হয়ে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত সড়কটি জন স্রোতে রূপ ধারণ করে।
রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ীসহ পূর্ব অংশের দলীয় নেতাকর্মীরা হাইকোট ও দোয়েল চত্বর হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করে। তারা জয় বাংলা ও জয়বঙ্গবন্ধু শ্লোগানসহ মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা শ্লোগান দেয়। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের হাতে নানা ফেস্টুন ও প্লেকার্ড দেখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দানের সময় সোহরাওয়াদী উদ্যানের বাইরে হাইকোর্ট থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি মোড়, শাহবাগ মোড়, শেরাটন, রমনাপার্ক ও মৎস্য ভবন এলাকা পর্যন্ত জনসভা বিস্তৃতি লাভ করে।
দুপুর আড়াইটায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হয়। এর আগে দেশের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

বাংলাদেশ