রাজউকের অনুমোদন না থাকলেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জমির ওপর রাস্তা নির্মাণ করছে আবাসিক কোম্পানি আশিয়ান সিটি। কোম্পানির যাতায়াতের সুবিধার্থে সরকারি খরচে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল (সিভিল এভিয়েশন) কর্তৃপক্ষের ব্যয় হচ্ছে পাঁচ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ৩০ ফুট প্রশস্ত এই রাস্তায় সরকারের প্রায় ২৫ বিঘা জমি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
সিভিল এভিয়েশনের এস্টেট শাখা সূত্রে জানা গেছে, অনুমতি না নিয়েই প্রকৌশল বিভাগ অপ্রয়োজনীয় একটি রাস্তা নির্মাণ করছে। রাস্তাটি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কোনো উপকারে আসবে না।
জানা গেছে, আবাসন কোম্পানি হিসেবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কোনো অনুমোদন নেই আশিয়ান সিটির।
দেখা গেছে, আশকোনা হজ ক্যাম্পের পূর্ব পাশে সিভিল এভিয়েশনের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে একটি রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাটি হজ ক্যাম্প থেকে পূর্ব দিকে আশিয়ান সিটি প্রকল্প পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে বেশ কিছু নিচু জায়গা ভরাট করা হচ্ছে, যা সিভিল এভিয়েশনের মালিকানাধীন ও সংরক্ষিত জলাধার।
এই সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে রাতের আঁধারে ১০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।পরিবারগুলোর সবাই বেসামরিক বিমান চলাচলে নিম্নশ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত। পরিবারগুলো অনুমতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিতে বসবাস করে আসছিল।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিভিল এভিয়েশনের নামে রাস্তাটি নির্মাণের কথা বলা হলেও সেখানে আশিয়ান সিটির লোকজন কাজ করছেন। রাস্তার কাজে আশিয়ানের বুলডোজার ও ডাম্প ট্রাক ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি রাস্তার দুই পাশে নিরাপত্তা সীমানা দেওয়ার কাজ করছেন আশিয়ান সিটির নিয়োগ করা লোকজন।
আশকোনার একজন বাসিন্দা জানান, আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ অনেক দিন ধরেই হজ ক্যাম্প থেকে তাদের প্রকল্প পর্যন্ত একটি প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করছিল। কিন্তু জায়গার অভাবে সেই চেষ্টা বাস্তবায়ন হয়নি। এবার তাদের আশা পূরণ হলো।
বেসামরিক বিমান চলাচলের এস্টেট শাখা সূত্র জানায়, তাদের অনুমতি ও মতামত না নিয়েই রাস্তাটি নির্মাণ করছে প্রকৌশল বিভাগ। অথচ সব জমিজমা তদারকি করে থাকে এই বিভাগ। এ ব্যাপারে তদন্তও হয়েছে। তদন্ত করেছেন এস্টেট বিভাগের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন। তাতে বলা হয়েছে, সিভিল এভিয়েশনের মালিকানাধীন জমির ওপর নতুন রাস্তা হলেও তাতে এস্টেট বিভাগের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
আরেকটি সূত্র জানায়, হজ ক্যাম্পসংলগ্ন জমিতে রাস্তা করা হলে অদূর ভবিষ্যতে হজ ক্যাম্প সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তা ছাড়া জলাধার ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের ফলে বিমানবন্দরের পরিবেশ এবং পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে বলেও স্থানীয় অধিবাসীরা জানান।
সিভিল ডিভিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোকাব্বর আলী এ ব্যাপারে বলেন, ‘এখানে পেরিফেরি (চারদিকে ঘোরানো) ধরনের একটি রাস্তা করা হচ্ছে মূলত কাওলায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কোয়ার্টারে বসবাসরতদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য। এ জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে প্রকাশ্য দরপত্রের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি জানান, এই রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।
তবে কাওলায় বসবাসরত সিভিল এভিয়েশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা কখনো হজ ক্যাম্পের দিক দিয়ে যাতায়াত করেন না। তাদের যাতায়াতের জন্য কাওলা থেকে বিমানবন্দর সড়ক পর্যন্ত সোজা রাস্তা রয়েছে। এই সোজা রাস্তা ব্যবহার না করে হজ ক্যাম্প দিয়ে ঘুরপথে তারা কেন যাতায়াত করবেন তা বোধগম্য নয়।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই কিলোমিটার নতুন এই রাস্তাটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য হলো আশিয়ান সিটির স্বার্থ রক্ষা করা। কারণ এই রাস্তা দিয়ে বিমানবন্দর থেকে সোজা আশিয়ান সিটির আবাসিক এলাকার মধ্যে গাড়ি চলাচল করবে।
সূত্র জানায়, পুরো রাস্তাটি আশিয়ান সিটির তত্ত্বাবধানেই নির্মিত হচ্ছে। অবশ্য হজ ক্যাম্পের পাশে একটি সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে মেসার্স লতিফ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড মেসার্স উত্তরা এন্টারপ্রাইজ কনসোর্টিয়ামের নাম। সিভিল এভিয়েশনের বরাদ্দ করা পাঁচ কোটি ১৫ লাখ টাকা মূলত সিভিল এভিয়েশনের প্রকৌশল শাখা এবং স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতার মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হবে। তবে এ কথা অস্বীকার করেছেন প্রকৌশলী মোকাব্বর আলী।
সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মচারীর ছেলে কবিরুল ইসলাম বলেন, এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কাজে বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের কাউকে দেখা যায়নি। আবাসন কোম্পানির লোকজন এলাকার সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে তাদের উচ্ছেদ করে সেখানে রাস্তার কাজ শুরু করে। উচ্ছেদ হয়ে যাওয়া একাধিক ব্যক্তি জানান, কাগজপত্রে ৩০ ফুট রাস্তার কথা বলা হলেও বাস্তবে সেখানে ৫০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা তৈরি হচ্ছে।