জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) মঙ্গলবার মূল এডিপি’র আকার ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ কমিয়ে চলতি অর্থবছরের (অর্থবছর-১৮) জন্য ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন করেছে।
আজ এনইসি বৈঠক শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এএইচএম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, বৈদেশিক উৎসের অংশ থেকে ৪,৯৫০ দশমিক ২৫ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে।
নগরীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, সংস্থাগুলোর নিজস্ব তহবিল ৯,২১৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা ধরে সার্বিক আরএডিপি’র আকার এখন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ দশমিক ৩৯ কেটি টাকা। এরমধ্যে ৯৬,৩৩১ কোটি টাকা আসছে স্থানীয় উৎস থেকে এবং ৫২,০৫০ কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে।
সংস্থাসমূহের নিজস্ব তহবিল থেকে আরএডিপিতে অর্থ সংস্থান ১,৫৪০ দশমিক ১৯ কোটি টাকা কমিয়ে ৯,২১৩ দশমিক ৩৯ কোটি ধরা হয়েছে।
কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে আরএডিপি চূড়ান্ত করার সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের বাড়তি চাহিদা এবং সে অনুযায়ী বাড়তি বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমূহের জন্য বাড়তি তহবিল বরাদ্দে কোন বাধা থাকবে না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে কোন প্রকল্প প্রিভাইজ করার সময় অপচয় এবং স্থানীয় লোকদের যে কোন প্রকল্পের বিবরণ তুলে ধরে প্রকল্প এলাকায় সাইনবোর্ড স্থাপন এড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। প্রকল্প অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রতা এড়ানোর জন্য পরিকল্পনা কমিশন থেকে কোন বিষয় জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়গুলোকে সে ব্যাপারে তৈরি থাকার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, রফতানি আয়, রাজস্ব আয় এবং রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের শেষে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি আরো অনেক ভালো হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, চলতি বছর জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা শতকরা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে।
বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, তারা বৈঠকে ১৮টির মতো সুপারিশ তুলে ধরেন। এরমধ্যে রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকালে মন্ত্রণালয় কর্তৃক সার্বিকভাবে মনিটরিং করা, পরিকল্পনা-মাফিক বৃক্ষরোপণ করা, এক প্রকল্পের পরিচালককে অন্য প্রকল্পের দায়িত্ব না দেয়া এবং সড়কের কাজে গুণগতমান বৃদ্ধি করা।
তিনি বলেন, এ ছাড়াও সড়ক দ্বীপ ও সড়কের পাশে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় পরিকল্পনামাফিক বৃক্ষরোপণ করা হবে।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, এনইসি’র বৈঠকে একটি সামগ্রিক প্রকল্পসহ মোট ৭টি প্রকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। তিনি জানান, আরএডিপিতে মোট ১ হাজার ৬৫৮টি প্রকল্প সংযুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, ১ হাজার ৩৬৫টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১৪৩টি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প, জাপান ডেবট ক্যানসেলেশন ফান্ড থেকে ৩টি প্রকল্প এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ১৪৭টি প্রকল্প।
এর আগে এনইসি চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকার এডিপি অনুমোদন করে। এই অর্থের ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা অভ্যন্তরীণ সম্পদ এবং ৫৭ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক সম্পদ থেকে আহরণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সূত্র অনুযায়ী, সংশোধিত এডিপিতে পরিবহন ক্ষেত্রেক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এর পরে রয়েছে বিদ্যুৎ, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লীর প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্র অবকাঠামো পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন ক্ষেত্র, শিক্ষা ও ধর্মীয় ক্ষেত্র, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা ক্ষেত্র এবং কৃষি ক্ষেত্র।
এছাড়াও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) উদ্যোগের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ৩০টি প্রকল্পের তালিকা করা হয়েছে।