প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার আইটি ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং জীবন-যাত্রাকে আরো সহজ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করে বলেন, কৃষকের ছেলে শিক্ষা নিয়ে কৃষিকাজে যাবে না, এই মনভাব যেন না থাকে। কৃষিকে আধুনিক পদ্ধতিতে যান্ত্রিকীকরণ করে হচ্ছে ফলে কৃষির যে জ্ঞান তারা পাবেন নিজের বাবা-মায়ের কাছ থেকে তাকে তারা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারবেন।
শেখ হাসিনা বুধবার দেশব্যাপী ই-কৃষি সেবা স¤প্রসারণের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ‘কৃষি বাতায়ন’ এবং ‘কৃষক বন্ধু ফোন সেবা’র উদ্বোধনকালে একথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ দু’টি সেবার উদ্বোধন করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কৃষিকে একটি পবিত্র কাজ উল্লেখ করে বলেন, এই কাজে সকলকেই সম্পৃক্ত হতে হবে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া, পেটের ক্ষুধা নিবৃত্ত করা, মুখের খাদ্য জোগানোর থেকে মহৎ কাজ আর হতে পারে না। তিনি এ সময় দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও সকলের প্রতি আহবান জানান।
কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মইনুদ্দীন আব্দুল্লাহ অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) করিব বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে ৫টি জেলা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল এবং সারাদেশের ৬৪টি জেলার ৫৬০টি উপজেলাতেই এই ভিডিও কনফারেন্সটি প্রচারিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল বিধায় জাতির পিতা স্বাধীনতার পরে কৃষিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। ফলে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ উঠে দাঁড়িয়েছিল এবং প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগ অর্জিত হয়েছিল।
ধীরে ধীরে কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলাও জাতির পিতার একটা লক্ষ্য ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু ’৭৫ এর ১৫ আগষ্ট সপরিবারে নিহত হওয়ায় জাতির পিতা তাঁর এই পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ করে যেতে পারেন নি এবং এরপরই দেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি শুরু হয়।
শুধু দেশের জন্য নয় সমগ্র বিশ্বেও জন্যই কৃষি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, কারণ খাদ্য চাহিদা কখনও শেষ হয়ে যাবে না। এটি বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার একটি বক্তব্যকে উদ্বৃত করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা কথা সবসময় বলতেন-আমাদের দেশের মাটি এত উর্বর যে, একটা বীচ ফেললেই এখানে গাছ হয়, ফল হয়। কাজেই আমার দেশের মানুষ কেন না খেয়ে থাকবে।
তিনি বলেন, একথাটা আমরা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি। কাজেই আমাদের মাটি সোনার মাটি। এখানে সোনা ফলে এবং যারা এই মাটিতে সোনা ফলায় তাঁদের সহযোগিতা করা আমাদের একান্তভাবেই কর্তব্য।
দেশব্যাপী ই-কৃষি সেবা স¤প্রসারণের লক্ষ্যে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ‘কৃষি বাতায়ন’ এবং ‘কৃষক বন্ধু ফোন সেবা’র উদ্বোধন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে দেশের মানুষ কৃষি বিষয়ক সকল ধরনের তথ্য পাবে। কোন সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করতে পারবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৩৩৩১ নম্বরে ফোন করে যে কোন একজন কৃষক আমাদের কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য নিতে পারবেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কমন প্রশ্নগুলোর উত্তর সম্বলিত রেকর্ডার চালু করার জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেন। যাতে একই প্রশ্নের উত্তর তাদের বার বার প্রদান করতে না হয়।
আমাদের অনগ্রসর কৃষকদের জন্য ‘সাথী’ নামের একটি অ্যাপস চালু হবার তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোবাইল ফোন শুধু কথা বলার জন্যই নয়, অনলাইনে এবং আমাদের স্থাপিত ডিজিটাল সেন্টার এবং কৃষকদের জন্য চালু করা অ্যাপ থেকে সবরকম তথ্য তাঁরা পেতে পারেন।
তিনি বলেন, এরফলে কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের বাজারদর জানতে পারবে তাই কেউ আর কৃষকদের ঠকাতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এভাবে কৃষকদের সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি যেমন নিচ্ছি তেমনি আজ থেকে এই ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকদের সেবা শুধু দেওয়া নয়, পাশাপাশি আমার দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে, খাদ্য পুষ্টি নিশ্চিত করে আমাদের দেশের মানুষের জীবনকে আমরা উন্নত করতে চাই।
কৃষি বাতায়ন ব্যবহারের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীর সাথে কৃষকের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, কৃষি গবেষণার সাথে মাঠ পর্যায়ের সংযোগ সাধন, কৃষি তথ্যভিত্তিক জ্ঞানভান্ডার গড়ে তোলা এবং মাঠ পর্যায় হতে কেন্দ্র পর্যন্ত বিবিধ রিপোর্ট আদান প্রদানে সহায়ক হবে। এ বাতায়নের সহায়ক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘কৃষক বন্ধু ফোন সেবা’র মাধ্যমে ৩৩৩১ নম্বরে ফোন করে কৃষক নিকটস্থ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে স্বয়ংক্রীয়ভাবে সংযোগ স্থাপন এবং অতি সহজে প্রয়োজনীয় কৃষি সেবা পেতে সমর্থ হবেন। ‘কৃষি বাতায়ন’ ও ‘কৃষকবন্ধু ফোন সেবা’ উদ্বোধনের ফলে কৃষকগণ তথা কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট জনগণ অতি সহজেই কৃষি সংক্রান্ত তথ্যাদি পাবেন।