দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা ও অন্যান্য প্রাথমিক সুবিধা দেয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বাসসকে জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ বাড়াতে ‘সি পাওয়ার প্রকল্প’ হাতে নেয়া হয়েছে- যা নারীর ক্ষতমায়নের উদ্যোগকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী এ প্রকল্প পরিকল্পনা করা হয়েছে। সারাদেশে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক সহযোগিতাও দেয়া হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের নির্বাহি কমিটি (একনেক)-এর ২০১৭ সালের ২ মে তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় এ প্রকল্পের জন্য ৮১ দশমিক ৮৯ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়।
পলক বলেন, মার্চ থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে এবং এবছরের নভেম্বরের মধ্যেই প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। ভবিষ্যতে যাতে আরো বেশি নারী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে যুক্ত হতে পারেন এ লক্ষ্যে এ প্রকল্পের সময়সীমা বাড়ানোর পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে।
প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে প্রকল্প পরিচালক সোলায়মান মন্ডল বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ হাজার ৫শ’ নারীকে তিন ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর মধ্যে ৪ হাজার জনকে আত্মকর্মসংস্থানের, ৪ হাজার জনকে তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদানের ও ২ হাজার ৫শ’ জনকে কল সেন্টার এজেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা রয়েছে এমন ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী নারী যারা ইংরেজি পড়তে ও লিখতে পারেন তারাই এই প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য বিবেচিত হবেন। দেশের ২১ টি উপজেলায় এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। উপজেলাগুলো হলো : সাভার, ফরিদপুর সদর, টাঙ্গাঈল সদর, জামালপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, চট্টগ্রামের হাটহাজারি, কুমিল্লা সদর (দক্ষিণ), নোয়াখালি সদর, রাঙ্গামাটি সদর, সিলেট সদর, রাজশাহীর পবা, পাবনা সদর, বগুড়া সদর, নওগাঁ সদর, রংপুর সদর, দিনাজপুর সদর, খুলনার ফুলতলা, যশোর সদর, কুষ্টিয়া সদর, বরিশাল সদর এবং পটুয়াখালি সদর।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, এই তিনটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম এমন তিনটি প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে মার্চে নয় মাসব্যাপি প্রশিক্ষণ শুরু করা হবে। প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী নারীরা প্রথম তিন মাসব্যাপি প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। পরে তাদের দু’মাসের ইন্টার্নশিপ দেয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য নারীদের ওয়েবসাইট, গ্রাফিক ডিজাইন, ডাটা এন্ট্রি, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল এ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এবং গুগল ট্রান্সলেশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
তথ্য প্রযুক্তি সেবা প্রদানে দক্ষ করে তুলতে নারীদের ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং প্রিন্টারস ও স্মার্ট ফোন মেরামত সম্পর্কে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
কল সেন্টার এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী নারীদের ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট, ডাটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট, ডকুমেন্ট স্ক্যানিং, ই-পাবলিশিং এবং ইনকামিং ও আউটগোয়িং কল ম্যানেজমেন্ট-এর ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
এই তিনটি প্রশিক্ষণে সফল নারীরা দু’মাসের ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে অংশ নেবেন। এসময় তারা ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা ইন্টার্নশিপ ভাতা পাবেন। ইন্টার্নশিপ শেষে নিজস্ব ব্যবসা শুরুর আগে প্রত্যেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
প্রকল্প পরিচালক সোলায়মান মন্ডল বলেন, যেসব নারী তিনটি পর্যায়ের প্রশিক্ষণ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন তাদের প্রত্যেককে ল্যাপটপ কেনার জন্য প্রকল্প থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বিভাগ থেকে লার্নিং এন্ড আর্নিং কর্মসূচির আওতায় সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ২০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকার ভ্রাম্যমান আইসিটি ট্রেনিং বাসে করে সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে নারীদের আইসিটি প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।