প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অধিকতর উন্নয়ন এবং বিশ্বে জাতির ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে বাংলা ভাষার যথাযথ চর্চা, ব্যবহার এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছি এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছি। এটি আমাদের জন্য বিরাট গৌরবের বিষয়। তাই এ ভাষার চর্চা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না।
তিনি আরো বলেন, বাঙালি হিসেবে আমরা আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অন্যান্য গৌরব সমুন্নত রাখবো এবং এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করবো।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৮ উপলক্ষে গতকাল বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের (আইএমএলআই) ৪দিনের কর্মসূচি উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ইনস্টিটিউটের নিজস্ব মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর সব ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষাকে সম্মান প্রদর্শন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রতীক হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন সারাবিশ্বে, ইউনেস্কো’র সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। পৃথিবীর সকল মাতৃভাষাভাষী এখন বাংলাদেশকে জানে, বাঙালির অবিস্মরণীয় আত্মত্যাগের কথা জানে।
তিনি বলেন, আমাদের জাতিকে ধ্বংস করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে পাকিস্তানী শাসকরা প্রথমেই আঘাত হানে বাঙালি সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যের ওপর। কিন্তু এর ফলাফল হিসেবে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি এবং বাঙালি জাতি একটি রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে।
শিক্ষামন্ত্রী নুুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং ঢাকায় ইউনেস্কোর প্রধান প্রতিনিধি বি কালদুনও বক্তৃতা করেন।
এতে ‘লিঙ্গুইস্টিক ডাইভারসিটি এন্ড মাল্টিলিঙ্গুয়ালিজম কাউন্ট ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শ্রীলংকার ন্যাশনাল কো-এক্সিজটেন্স ডায়ালগ এন্ড অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজের সচিব ডব্লিউএমপিজি বিক্রমসিংগে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। ধন্যবাদ জানান আইএমএলআই’র মহাপরিচালক ড. জিনাত ইমতিয়াজ আলী।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ, লেখক, কবি, সাংবাদিক, একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের একজন ছাত্র হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ভাষা আন্দোলন সূচনা করার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা তমুদ্দুন মজলিস, ছাত্রলীগ এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে বাংলা ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হন। সে বছর পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান রচিত হয়। এতে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে মর্যাদা লাভ করে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন না করলে বাংলা রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা পেতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একুশে ফেব্রুয়ারিকে ছুটি হিসেবে ঘোষণা করে এবং শহীদ মিনার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ সরকার শহীদ মিনার নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ এবং নির্মাণ কাজ শুরু করে। কিন্তু জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করার পর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায়নি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যান। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নিয়মিতভাবে বাংলায় ভাষণ দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে জনগণের বিপুল রায় নিয়ে ২১ বছর পর তাঁর দল আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আবার প্রাণ ফিরে পায়।
তিনি বলেন, সে বছর ক্ষমতা গ্রহণের পর আমাদের সমৃদ্ধ বাংলা ভাষাকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা নিরলস কাজ করি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে ঘোষণা করে।
তিনি বলেন, কানাডা প্রবাসী রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালামসহ মাতৃভাষা অনুরাগী কয়েক ব্যক্তি এ উদ্যোগ নেয়। ‘সে সময় আমার সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং সাফল্য অর্জিত হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে বর্বরোচিতভাবে হত্যার পর আইয়ুব খানের মতো সামরিক আইন জারি করায় দেশ কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। তিনি বলেন, আইয়ুব খানের মতো জেনারেল জিয়াও এক সাথে সেনা প্রধান ও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের পর ক্ষমতা সেনানিবাসে সীমাবদ্ধ ছিলো।
বাঙালি সংস্কৃতির উন্নয়নে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিপন্ন ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষায় তিনি ২০০১ সালের ১৫ মার্চ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তিনি বলেন, আমরা ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু করি। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আবার নির্মাণ কাজ শুরু করে। তিনি বলেন, ২০১০ সালে আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আইন প্রণয়ন এবং ইনস্টিটিউটে একটি ভাষা জাদুঘর চালু করি।