প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অনেক সংগ্রামের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চা ভুলে গেলে চলবে না। বাঙালি হিসেবে সব ঐতিহ্য আমাদের ধারণ করতে হবে।
বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চারদিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। ভুক্তভোগী হিসেবে আমাদের বিষয়টি মনে আছে। পাকিস্তান থেকে কখনও বলা হয়েছে আরবি হরফে, আবার কখনও রোমান হরফে বাংলা লেখার কথা বলা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ভাষা ও স্বাধীনতা নিয়ে এতো ষড়যন্ত্রের পরও মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আর আমাদের কেউ অবহেলা করতে পারে না। নিজেদের প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্বে একটা মর্যাদা পাচ্ছি।
হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা উদ্ধার, ভাষা নিয়ে গবেষণা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা ও অন্ধ-প্রতিবন্ধীদের ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষা নিয়ে গবেষণা করার জন্য আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে কর্তব্যরতদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় প্রথম ভাষণ দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতিবছর জাতিসংঘের অধিবেশনে যতোবার গিয়েছি আমিও বাংলায় ভাষণ দিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই। দেশকে এগিয়ে নিতে এবং বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে সবার সহযোগিতা দরকার। এছাড়া আগামী প্রজন্মের কাছে দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরতে আমাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যা করা হয়। এরপর যারা ক্ষমতায় আসে তারাও আইয়ুব-ইয়াহিয়ার মতো ক্ষমতা দখল করে। অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা যেন নিজেদের ভাষা ও ঐতিহ্যকে ভুলে না যাই। তবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যে জর্জরিত ছিল তা থেকে আমরা এখন অনেকটা মুক্তি পেয়েছি। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে থাকতে চাই। সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ছিল নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। অল্প দিনের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো। এ জন্য দেয়া শর্তগুলো আমরা পূরণ করতে পেরেছি। আসলে যে জাতি রক্ত দিয়ে ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, জীবন দিয়ে স্বাধীনতা আনে সে জাতির আগে নিম্ন শব্দটি মানায় না। এ জন্য আমরা নিম্ন মধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।