প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, অন্য কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ করা হয়নি। জনগণের সেবা নিশ্চিত করতেই সিটি করপোরেশন ভাগ করা হয়েছে। যথেষ্ট টাকা থাকলে ঢাকাকে চার ভাগ করাতাম।
বুধবার জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনসংখ্যা বাড়ছে। টঙ্গী থেকে সদরঘাট বিশাল এলাকা। একজন মেয়রের পক্ষে বিশাল এলাকা সামাল দেওয়া কঠিন।‘
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘ এক সময় দেশে ১৯টা জেলা ছিলো। সেটি ৬০টি করা হয়েছিলো। বিভাগ করা হয়েছে সাতটি। কেউ কি বলবে দেশকে ভেঙে খানখান করা হয়েছে? জনসংখ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেবা দিতেই বিকেন্দ্রীকরণ করা।’
হাসিনা আরও বলেন, ‘পুলিশকে আট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। থানাগুলোকে ৪১টি থানায় বিভক্ত করা হয়েছে। এক সময় ঢাকার সংসদীয় আসন ছিলো একটা। পরে চারটি করা হয়। এখন ঢাকা সিটির সংসদীয় আসন ১৫টি। তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি?’
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন ঢাকা ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এটা সঠিক নয়। রাজধানী ঢাকাতে ১৭টি ইউনিয়ন আছে। ক্যান্টনমেন্ট আছে। এগুলো ডিসিসির আওতায় না। বোর্ডের আওতায় এটি চলে। ঢাকা এমনিতেই বিভক্ত আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কার যে কী অসুবিধা হচ্ছে আমি বুঝি না। লন্ডনেও দুটি সিটি করপোরেশন আছে। ফিলিপাইনে আছে ১২টা। এটা নতুন কিছু না। কিছু কিছু লোক জটিলতা তৈরি করছে। চেঁচাচ্ছে। যারা বিরোধিতা করেছে তারা অন্য কোনও উদ্দেশ্যে করছে। তাদের একটাই কাজ সরকারের কাজে বাগড়া দেওয়া।’
হাসিনা বলেন, ‘যখন বিদ্যুৎ নাই, তখন দাও দাও। যখন উৎপাদন বাড়ালাম। তখন বলে কেন বাড়ানো হলো? ফার্নেস অয়েল দিয়ে কেন করা হলো? ডিজেল দিয়ে কেন করা হলো?’
তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি। আমরা দেশ থেকে জঙ্গিবাদ দূর করেছি। যারা এখন অনেক কথা বলছেন তারা হয়তো বলবেন দেশে এখন কেন জঙ্গি বাদ নেই? কেন বোমার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না?’
দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অবস্থা ভালো। এটা নিয়ে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছে। যারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারবে না অথচ যাওয়ার খায়েস আছে তারাই এসব কথা বলছে। যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না। তাদের পক্ষে (যুদ্ধাপরাধীদের) রাখঢাক না রেখেই কথা বলছেন তারাই এসব কথা বলছেন।’
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবেই। কেউ তাদের রক্ষা করতে পারবে না। বিরোধী দল জাতির জনকের হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা করেছিলো। পারেনি। যুদ্ধাপরাধীদেরও রক্ষা করতে পারবে না।’
খালেদা জিয়ার রোডমার্চ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ বিরোধী দল সংসদ রেখে সড়কে গেছে। এখন কার র্যালি করছে। রাস্তা খারাপ বলে কিছুদিন আগে চিল্লাচিল্লি করলেন। রাস্তা যদি খারাপ হয় তবে হাজার হাজার গাড়ি নিয়ে র্যালি করলেন কীভাবে? আমি মনে করেছিলাম বিভিন্ন সভায় তিনি রাস্তা নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু বলেননি। তারমানে রাস্তার অবস্থা ভালো। কিন্তু উনি (খালেদা) ধন্যবাদ দেননি।’
টিাপইমুখ বাঁধ নিয়ে ভারতে খালেদা জিয়ার চিঠি প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উনি চিঠি দিয়েছেন। এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। উনি কী লিখলেন আর কী জবাব পেলেন তা জনগণকে জানাননি। চুপি-চুপি চিঠি চালাচালি ভালো দেখায় না। আমি আশা করবো সংসদে এসে চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে জনগণকে জানাবেন।’
টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষতি হোক এমন কিছু করতে দেওয়া হবে না। এরই মধ্যে দু’জন প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে।’
ভারতের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানা সমস্যা দূর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিরোধীদলীয় নেতার জন্য ফেনীতে ৪৬ বিঘা জমি আদায় করা হয়েছে। সারা দেশে ১৭ হাজার একর জমি আদায় করা হয়েছে।’
বিএনপিতে যোগ দিলে ভালো পদ দেওয়া হবে, খালেদা জিয়ার এ কথার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি মিলিটারি ও উচ্ছিষ্টভোগীদের নিয়ে গঠিত। এতে এক গাছের ছাল আরেক গাছের বাঁকল রয়েছে। আর আওয়ামী লীগে রয়েছে নীতিবান ও আদর্শবাদী কর্মী। বড় তো নয়ই, তৃণমূলের কর্মীদেরও কেনা যায় না। আইয়ুব খান থেকে জিয়া এমনকি এরশাদও কর্মীদের কেনার চেষ্টা করেছে। পচা কমিউনিস্টগুলো গেছে বিএনপিতে, ভালোগুলো এসেছে আওয়ামী লীগে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছেন-আমার ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকে। আমি না কি ভেগে যাবো? আমি তো আমার ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলেছি। তারা চাকরি করে খাচ্ছে। তার ছেলেদের একজনকে মানি লন্ডারিংয়ে পিএইচডি আরেকজনকে ড্রাগে গ্রাজুয়েট করেছেন। উনার জন্ম তো ভারতের শিলিগুড়িতে। ভাগলে উনার ভাগার কথা। উনার যাওয়ার জায়গা রয়েছে। উনি এতিমের টাকা মেরে খেয়েছে। কালো টাকার দায়ে জরিমানা দিয়েছে।’
পদ্মা সেতু নিয়ে খালেদার কথার জবাবে হাসিনা বলেন, ‘উনি বলেছেন ক্ষমতায় গেলে উনি নাকি দুটো পদ্মা সেতু বানাবেন। বিগত ১০ বছরে কয়টা সেতু করেছেন?’
শেয়ার বাজার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাবিশ্বের এটা পুঁজিবাজারের কাগজে লেখা থাকে এখানে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। সে কারণে এখানে বুঝেশুনে বিনিয়োগ করার অনুরোধ করবো। কারো কথা শুনে বাড়ি-জমি বিক্রি করে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবেন না। কিছু লোক কারসাজি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
বিরোধীদল আগামী অধিবেশনে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন।