হকার পুনর্বাসনে প্রণীত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে : সাঈদ খোকন

হকার পুনর্বাসনে প্রণীত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে : সাঈদ খোকন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছেন, হকারদের দেশে এবং বিদেশে পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন হবে। এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই হকারদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হবে।
মেয়র খোকন বাসসকে জানান, চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় এ প্রস্তাবনার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা ও গ্রুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, প্রথমে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রকৃত হকারদের পরিচয়পত্রসহ একটি তালিকা প্রস্তুত করা হবে। হকারদের পরিবার-পরিজনের কথা চিন্তা করে ডিএসসিসি তাদের জন্য পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে। যোগ্যতা ও বয়স অনুযায়ী হকারদের পুনর্বাসনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী তালিকাতুক্ত শিক্ষিত হকারদের চাকরি, যুব হকারদের বিদেশে প্রেরণ ও বয়োবৃদ্ধদের নির্ধারিত স্থানে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করে তাদের পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে। মেয়র বলেন, তালিকাভুক্ত হকাররা যারা বিদেশে যেতে চান তাহলে তাদের ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আবেদন করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে কাজ করার জন্য উপযুক্ত করা হবে বলে তিনি উল্লেখ কেরন।
সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সাথে আলোচনা করে বিদেশে শ্রমিক হিসেবে চাকুরীর মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে। ইতোমধ্যে কিছু আবেদন সিটি কর্পোরেশনে এসেছে। তাদের বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এছাড়া শিক্ষিত হকাররা চাইলে সরকারী বেসরকারী, আধা সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকুরীর আবেদন করতে পারবেন। সিটি কর্পোরেশন বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সাথে আলোচনা করে তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেবে বলে প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়।
একবার উচ্ছেদ করার পর আবারো ফুটপাতে বসে যাওয়া প্রসঙ্গে ডিএসসিসি মেয়র বাসসকে বলেন, নগরীর মানুষকে নির্বিঘেœ ফুটপাতে চলাচলের সুবিধার্থে সিটি কর্পোরেশনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন অবস্থাতেই হকারদের জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা বা ফুটপাতে বসতে দেয়া হবে না।
হকার্স ফেডারেশনের সূত্রে জানা গেছে গুলিস্তান এলাকায় ২ হাজার ৫০২ জন, শাহবাগ চত্বর এলাকায় ৭৪০ জন ও নিউমার্কেট এলাকায় ৮৭২ জন হকারের তালিকা করা হয়েছে। এদিকে হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম জানান, ঢাকার ২০ হাজার হকারকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে তাদেরকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ।
তিনি বলেন, রাজধানীর গুলিস্তান, শাহবাগ ও নিউমার্কেট এলাকায় ৪ হাজার হকারের তালিকা করা হলেও বিদেশে যাবার জন্য এ পর্যন্ত ৩৪৩ জন কর্পোরেশনে আবেদন করেছেন। কাশেম বলেন, ‘২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখ কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গমনাগমন করেছে। সেই হিসেবে রাজধানীর ২০ হাজার হকারকে বিদেশে পুনর্বাসন করা সিটি কর্পোরেশন বা সরকারের পক্ষে কঠিন হবেনা
বলে তিনি মনে করেন।
পুনর্বাসন কার্যক্রম দ্রত সম্পন্ন না করায় ঢাকা মহানগরীর ফুটপাত হকারমুক্ত করা যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, একজন হকারের মূলধন ৫শ’ থেকে ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের যে কোন দোকান বরাদ্দ নিতে হলে তাকে ১ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা এককালীন দিতে হবে। এই টাকা দেয়া হকারদের পক্ষে সম্ভব নয়, এই টাকা দেয়ার পর তাদের দোকান বুঝে পেতে ৫ বছর বসে থাকতে হয়। হকারদের নামে দোকান বরাদ্দের পর কিস্তিতে টাকা আদায় করার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা মহানগর মতিঝিল জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বাসসকে বলেন, ‘হকারদের বিষয়টির একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া উচিৎ। তারা একবার বসে, আবার উঠিয়ে দেয়া হয়, এটা একটা ছিনিমিনি খেলা বলে আমার কাছে মনে হয়। হকার উচ্ছেদ অভিযানে সিটি কর্পোরেশন পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার প্রয়োজন মনে করলে পুলিশ তাদেরকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন স্থানে যানজট নিরসন ও জনসাধারনের চলাচল নির্বিঘœ করতে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবার-শনিবার নগরীর উপযুক্ত স্থানে ‘হলিডে মার্কেট’ চালুর নির্দেশ দেন। পাশাপাশি সদরঘাটের পাশে বহুতল বিশিষ্ট হকার্স মার্কেট নির্মাণ করে প্রকৃত হকার্সদের নিকট দোকান বরাদ্দ দেয়ারও তিনি নির্দেশ দেন।

বাংলাদেশ