দ্বিতীয় দিনের আক্ষেপ মেটালো নুরান সিস্টার্স

দ্বিতীয় দিনের আক্ষেপ মেটালো নুরান সিস্টার্স

মেরিল নিবেদিত ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভ্যালের দ্বিতীয় দিন ছিল শুক্রবার। উৎসব উপভোগ করে ছুটির দিনটাকে মাতিয়ে নিতে সবাই ছুটে এসেছিলেন রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম। কিন্তু আজকের শিল্পীদের পরিবেশনা ছিল যেন কিছুটা ম্লান। আরিফ দেওয়ান ছাড়া তেমন করে কেউই শ্রোতাদের সুরের পিপাসা মেটাতে পারেননি।

চেনা যাচ্ছিল না গেল দুইবারের লোক গানের উৎসবকে। পাশাপাশি চোখে লেগেছে একটি পরিবেশনার পর আরেকটি পরিবেশনা শুরু হওয়ার দীর্ঘ বিরতি। শিল্পীর সংখ্যা আরও বেশি প্রয়োজন ছিল বলে দাবি করেন আগত অনেক দর্শক-শ্রোতা। সেইসঙ্গে এত বড় আয়োজন মাতিয়ে রাখার জন্য প্রাণবন্ত পরিবেশনা নেই বলেও আক্ষেপ করেন তারা।

আবার কেউ কেউ দাবি করেন, বাংলা ভাষার শিল্পী বাছাইয়ে এবার সিনিয়র লোকসংগীত শিল্পীদের প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টি খুবই ভালো লেগেছে। কিন্তু বেশিরভাগ শিল্পী বয়সের কাছে হার মেনেছেন, উৎসব মাতিয়ে রাখতে গিয়ে। এখানে আসলে স্টেজ মাতানোর মতো শিল্পীদেরকেই প্রয়োজন। মানুষজন কষ্ট করে আসেন, মধ্যরাত অবধি জেগে থাকেন একটু উপভোগের আশাতেই। তারা টেনে আনেন মমতাজ, জলের গান, অর্ণব, লালন ব্যান্ড, আনুশেহ আনাদিল, কুদ্দুস বয়াতী, বারী সিদ্দিকী, কাঙালিনী সুফিয়া, ইসলাম উদ্দিন পালাকারের মতো মঞ্চ মাতানো শিল্পী ও দলের নাম। অনেকে ভারতের পবন দাস বাউল, অর্ক মুখার্জিকে মিস করছেন বলেও উল্লেখ করেন।

jagonews24

তবে কথায় আছে শেষ ভালো যার সব ভালো তার। সেই কথারই প্রমাণ দিয়ে গেল দিনের সেরা আকর্ষণ নুরান সিস্টার্স। ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের বিখ্যাত ওস্তাদ গুলশান মিরের সুযোগ্য কন্যা সুলতানা নুরান ও জ্যোতি নুরানের দলের নাম নুরান সিস্টার্স। বৈঠকি মেজাজের গান গেয়ে তারা দুনিয়াজুড়ে পেয়েছেন খ্যাতি। গত বছর প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছিলেন লোকসংগীতের উৎসবে গাইতে।

এসেই মাতিয়ে গিয়েছিলেন লোক গানের সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে। মুগ্ধতা নিয়ে সবাই সেদিন বাড়ি ফিরেছিলেন নুরান সিস্টার্সের গান শুনে। এবার তাই প্রত্যাশাটা ছিল আরও বেশি। দিনভর ছিল প্রতীক্ষাও, কখন মঞ্চে আসবেন দুই বোন। গাইবেন, পান করাবেন সুরের সুধা। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা মেরিল নিবেদিত অনুষ্ঠানটির দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই দর্শকদের সংগীত উপভোগে আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের গানের দল বাউলা (বাংলাদেশ)। এরপর আসেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত গায়ক আরিফ দেওয়ান, কুটুম্বা (নেপাল), মিকাল হাসান ব্যান্ড (পাকিস্তান), শাহজাহান মুন্সি (বাংলাদেশ)।

সেই ধারাবাহিকতা নিয়ে অবশেষে রাত ১১টায় মিলল কাঙ্খিত পরিবেশনার দেখা। উপস্থাপিকা নুরান সিস্টার্সের নাম ঘোষণা করতেই জেগে উঠল আর্মি স্টেডিয়াম। গগনবিদারী চিৎকারে দুই বোনকে শুভেচ্ছা জানাল লাখো শ্রোতা। তারাও খুলে দিয়েছিলেন সুর আর গান দিয়ে সাজানো তাদের ভান্ডার। সুর, তাল আর পাঞ্জাবি বাদ্যের জৌলুসে ধাঁধিয়ে গেল সুর পাগলদের মন, প্রাণ। সেই তৃপ্তির রেশ নিয়েই সাঙ্গ হলো দ্বিতীয় দিনের উৎসব। শুরু হলো বাড়ি ফেরার পালা।

তবে এ ফেরাই শেষ নয়। আবারও দেখা হবে শনিবার, উৎসবের শেষ দিন। এদিন সংগীত পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের শাহ আলম সরকার ও আলেয়া বেগম, শাহনাজ বেলী, ইরানের রাস্তাক, ভারদের বাসুদেব দাস বাউল ও মালী থেকে আগত তিনারিওয়েন। শনিবারই ফুরাবে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ লোক সংগীতের এই মেলা।

বিনোদন