বেঙ্গল ফাউন্ডেশন শাস্ত্রীয় সংগীতের ঐতিহ্যগত গঠন ও কৌশলের প্রতি সাধারণ শ্রোতাদের আগ্রহ বাড়াতেই ২০১২ সালে ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব বাংলাদেশ’ আয়োজনের উদ্যোগ নেয়। সেই থেকে প্রতি বছরের শীতকালে পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
এ উৎসবে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। এরইমধ্যে ধ্রুপদী সংগীতের উৎসবটি বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। শীতকাল আসতে না আসতেই সংগীতপ্রেমীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন এই উৎসব উপভোগের।
ঢাকার বাইরে থাকা অনেকেই উৎসবটি সরাসরি উপভোগ করতে বুক করে রাখেন ঢাকায় থাকা আত্মীয়, বন্ধু-স্বজনদের বাসাবাড়ি। অন্যান্যবারের মতো এবারেও আগ্রহের কমতি নেই। অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানতে চাইছেন অক্টোবর শেষ হতে চললো কিন্তু বেঙ্গল উৎসবের কোনো সাড়া শব্দ নেই কেন? উৎসব কী এবার হচ্ছে না? হলে কবে, কখন, শিল্পী কারা?
এদিকে গতকাল শনিবার বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় বেঙ্গল উৎসব নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেখানে উল্লেখ আছে আগামী ১৮ অক্টোবর সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে। তবে বেঙ্গল উৎসব বিষয়ক কোনো তথ্য নেই।
এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, এই বিষয়ে যা বিস্তারিত বলার তা ১৮ অক্টোবরের সংবাদ সম্মেলনেই বলা হবে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, উৎসব না হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। আয়োজকরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সেরে ফেলেছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিল্পী নির্বাচনও প্রায় শেষ বলা যায়। এবারে তথ্য প্রযুক্তিতেও থাকবে অনেক বৈচিত্র আর চমক। উৎসবকে শ্রোতা-দর্শকের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতেই মূলত এই প্রচেষ্টা।
তবে দিন, তারিখ, স্থান ঘোষণার দেরি কেন জানতে চাইলে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানালেন, জটিলতা দেখা দিয়েছে ভেন্যু নিয়ে। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো কিছুই ঘোষণা দেয়া যাচ্ছে না।
এ কথা সবারই জানা বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ও ব্লুজ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনায় ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীতে অবস্থিত আর্মি স্টেডিয়ামটি। ষষ্ঠবারের মতো আয়োজন করতে যাওয়া এবারের উৎসবের জন্য এখনো ভেন্যু বরাদ্দ পায়নি। সেজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েও ভেন্যুর অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে উৎসব আয়োজকদের।
একটি সূত্র জানিয়েছে, আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ না পেলে এবারের উৎসব চলে যেতে পারে দেশের বাইরেও। বেঙ্গলের ওই সূত্রটির দাবি, এই উৎসবের শিল্পী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান পারফেক্ট হারমোনি গ্লোবাল উৎসবটি দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো একটি দেশের রাজধানীতে আয়োজন করবে। কারণ এরইমধ্যে শিল্পীদের ঠিক করা হয়ে গেছে। এখন তাদের শিডিউল ক্যান্সেল করে পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই আন্তর্জাতিক উৎসব ব্যবস্থাপনায় প্রশংসিত ওই প্রতিষ্ঠানটির।
এ নিয়ে বেশ জটিল অংকের সম্মুখেই বলা চলে ধ্রুপদী সংগীতের আন্তর্জাতিক আয়োজন ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব বাংলাদেশ’। ভেন্যু বরাদ্দ নিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামে উৎসবটি আয়োজন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আয়োজকরা। তাদের দাবি, শুরু থেকেই এখানে উৎসবটি হচ্ছে। এখানে সবাই অভ্যস্ত। নিরাপত্তাও এখানে জোরদার থাকে। দর্শকরাও এখানে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকেন। তাই আর্মি স্টেডিয়ামকেই টার্গেট করে চেষ্টা চলছে।
তবে আর্মি স্টেডিয়াম না হলে সেক্ষেত্রে দেশের অন্য কোনো ভেন্যুতে এটি আয়োজন করা হবে কী না সেটি নিশ্চিত নয়। তাই আশংকা রয়েছে উৎসবটি এবার হাতছাড়া হতে পারে বাংলাদেশের। বিশ্ববরেণ্য শিল্পী আর বাদকদের সুর-সংগীতের মূর্ছনা সরাসরি উপভোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন দেশের শ্রোতা-সংগীত পিপাসুরা। বিশাল এই আয়োজন থেকে বেশ বড় অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে পারে বাংলাদেশ।