মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিলের হুমকি দেয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আংশিক তুলে নেয়ার শর্তে ২০১৫ সালে দেশটির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে দেয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, বিভিন্নভাবে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে ইরান। সে কারণে তিনি পরমাণু চুক্তি আর নবায়ন করবেন না। ইরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রমে মদদ দেয়ার অভিযোগ করেন তিনি। পরমাণু চুক্তি থেকে তার দেশ যে কোনো সময় বেরিয়ে যেতে পারে।
তিনি ওই ভাষণে ২০১৫ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার করা পরমাণু চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে চুক্তি হিসেবেও উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পের বক্তব্যের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চুক্তি স্বাক্ষর করা অন্য দেশগুলো। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে যৌথ এক বিবৃতিতে জানান, ‘আমরা আশা করি যে, মার্কিন প্রশাসন এবং কংগ্রেস কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে যেটা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি স্বরূপ, সেগুলো বিবেচনা করবে; বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে এসে নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে।’
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে করা চুক্তি আন্তর্জাতিক এবং চাইলেই কোনো একক দেশ সেই চুক্তি শেষ করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা তো দ্বিপাক্ষিক কোনো চুক্তি নয়। কোনো একক দেশের ব্যাপার নয় এটা … মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনেক ক্ষমতা, কিন্তু এ ব্যাপারে নয়।’
ট্রাম্পের বক্তব্যের পর রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে জানান, আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে হুমকি দেয়া এবং আক্রমণাত্মক কিছু বলার জায়গা নেই। পরমাণু চুক্তি অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন তিনি।
ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে চুক্তি হিসেবে ট্রাম্পের মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তে ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরবও।
তবে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাস ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নয়ায়নে অনেকটাই অাশাবাদী। জাতিসংঘ মহাসচিবের একজন মুখপাত্র এ কথা জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের মন্তব্যের আগেই ইরান জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে সেই চুক্তির অবসান ঘটবে। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর রুহানি বলেন, আজকে যা শুনলাম তা ভিত্তিহীন অভিযোগের পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছুই না।
তিনি আরও বলেন, ইরানের মানুষ আপনার (ট্রাম্প) কাছ থেকে অবশ্য ভিন্ন কিছু আশা করে না।
ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব কংগ্রেসের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। চুক্তি বাতিলের ব্যাপারে মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও তিনি আলোচনা করার কথা জানিয়েছেন।
সূত্র : আল জাজিরা