আমেরিকা প্রবাসী নারী রুবি সুলতানা গেল সোমবার (৭ আগস্ট) ফেসবুক লাইভে এসে বলেছিলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ খুন হইছে। আমার হাসব্যান্ড এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে। আমার হাজব্যান্ড করাইছে, এইটা সামিরার ফ্যামিলি করাইছে আমার হাজব্যান্ডরে দিয়ে, সবাইরে দিয়ে, সব চাইনিজ মানুষ ছিলো’।
এসব কথা বলার দুদিন পরই সালমান শাহ মৃত্যু জট যখন নতুন করে মোড় নিচ্ছিল তখনই রুবি সবকিছু অস্বীকার করেন। আরেক ভিডিও বার্তায় হাসতে হাসতে বলেন, ‘সালমান শাহ খুন হতে পারে, আত্মহত্যাও করতে পারে। আমি এর কিছুই জানি না। কেউ আমাকে গালাগালি করলেও আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি যদি খুনি হই তাহলে আমাকে প্রমাণ করুক যে আমি খুনি। আমি আমেরিকান সিটিজেন। এখানে এসে আমাকে এত সহজে ধরে নিয়ে যাওয়া যাবে না।’
রুবির প্রথম স্বীকারোক্তিতে নড়েচড়ে উঠেছিল সালমান শাহের পরিবার। তারা ভেবেছিল মৃত্যুর ২১ বছর পর এবার সালমানের মৃত্যুর আসল রহস্য উন্মোচিত হবে। কিন্তু রুবির এমন পল্টিবাজিতে সব থমথমে হয়ে গেল। কিন্তু সামলানের পরিবার এখনো আশা ছাড়েনি।
জাগো নিউজকে সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুম বলেন, ‘একজন স্টেটমেন্ট দেয়ার পর যদি অস্বীকার করে তাহলে এটা খতিয়ে দেখবে দেশের প্রশাসন। আমার মনে হচ্ছে, রুবিকে তার স্বামী মেরে ফেলার হুমকি দেয়ার পর সে ভোল পাল্টেছে। তার ওইদিন কোনো সমস্যা হয়েছিল বলেই সত্য কথা বলছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মহিলা (রুবি) তো আমার কোনো আত্মীয় না। সে সালমান শাহের স্ত্রী সামিরার মামি। সামিরাকে সে অকথ্য ভাষায় গালি দিলো, পরে আবার বলছে যা বলছে ঠিক বলেনি। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন সে কোরআনের কথা বলে। সে বিপদে পড়ে কোরআনের কথা উল্লেখ করেছিল। এখন আবার পল্টি মারছে। এইসব বিষয় ঘেঁটে দেখতে হবে রাষ্ট্রকে।’
আপনারা কী প্রসাশনের সহায়তা নিচ্ছেন? আলমগীর কুমকুম বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যাইনি। এর বিচার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়েছি এখন। সালমান শাহের মা (নীলা) সালমান মারা যাওয়ার পর তাহাজ্জুতের নামাজ পড়ে বিচারের দাবিতে বিচানায় বসে কান্নাকাটি করে। এর বিচার একদিন হবেই।’
কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর বাবা, কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাদেশের মানুষের। তেমনটি ইমন আমাদের সন্তান, কিন্তু সামলান শাহ সারাদেশের। এখন দেশের মানুষের সম্পতি সালমান শাহ, দেশের মানুষই এর বিচার চাইবেন এবং চাইছে। এত মানুষের আরজি প্রধানমন্ত্রী শুনবেন না। যে মামলাটি ২১ বছর পর নতুন সালমান খুনের আসামির মুখ দিয়েই নতুন করে জেগে উঠলো সেই মামলার মীমাংসা চায় দেশবাসী।’
তিনি বলেন, ‘সামিরার বাবা হীরা কেন এত কথা বলছে মিডিয়াতে? তার মেয়ে সামিরা, তার স্ত্রী কেন প্রকাশ্যে কথা বলছে না? সব মিডিয়া সামিরার বাবা, স্বামীর কাছে না গিয়ে সামিরার মা, ও সামিরার কাছে যাক। তথ্য পেয়ে যাবে।
আর সামিরার বাবা মিডিয়ার বক্তব্য দেয় যে, ‘সালমান শাহ গরীব ছিল? তাকে নাকি টাকা দিত? তার তো ওইসময় ছয়টা গাড়ি ছিল। সালমান শাহ মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে তার বউ সালমানের কাছ থেকে পঞ্চাশ লাখ লোন নিয়েছিল। এসব মনগড়া হাস্যকর কথা কেন বলে সালমান শাহের শ্বশুর?’
সবশেষে আলমগীর কুমকুম বলেন, ‘হযরত শাহজালালের দর্গায় কোনো আত্মহত্যাকারীর খবর হয়না। এটা নিয়ম বহিভুর্ত। অনেকবার চেষ্টা করেও কেউ গলায় ফাঁস, বিষ খাওয়া, আত্মহত্যাকারীর খবর দিতে পারেনি। সেখানে সালমান শাহকে কবর দেয়া হয়েছে। সেসময় শাহজালালের মাজারের পাশে সালমান শাহকে কিভাবে খবর হয়েছিল? এটা হচ্ছে আল্লাহর কুদরত।’
উল্লেখ্য, সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশকে জানান তার স্ত্রী সামিরা। কিন্তু সালমান শাহের পরিবার একে হত্যা বলে আসছিল। তবে গত দুই দশকেও এই মামলার রহস্য উদঘাটন হয়নি।
পুলিশ দুই দফা ময়নাতদন্ত করে একে আত্মহত্যাই বলেছিল। কিন্তু নারাজি আবেদন করেছে সালমান শাহের পরিবার। মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তও হয়েছিল। এখন মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ে রয়েছে।