দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থেকেও চাকরিতে বহাল রয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মন্ডল। একই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার রংপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ হুমায়ুন কবীর দুর্নীতির মামলায় সাবেক উপাচার্য মুহাম্মদ আবদুল জলিল মিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেজিস্ট্রার শাহজাহান আলীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলায় অপর তিন আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মোরশেদ উল আলম রনি, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এটিজি এম গোলাম ফিরোজ ও সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) শাহ খন্দকার আশরাফুল ইসলাম বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার শাহজাহান আলী মন্ডল এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া বাকি তিন কর্মকর্তা গত রোববার থেকে ছুটির আবেদন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে তাদের ছুটির আবেদন মঞ্জুর না করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কারাগারে থাকা কর্মকর্তা এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া বাকি তিন কর্মকর্তা বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি এখন পর্যন্ত।
জানা গেছে, পদোন্নতি বোর্ডের সদস্যদের আপত্তি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সিন্ডিকেট সভায় দুদকের অভিযোগভুক্ত এই চার কর্মকর্তার পদন্নোতি দেন। বিষয়টি নিয়ে গত ১৭ জুলাই জাগো নিউজে ‘বেরোবিতে দুর্নীতি মামলায় চার্জশিটভুক্ত ৪ কর্মকর্তার পদন্নোতি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
দুদকের রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে দুদকের সমন্বিত রংপুর জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আকবর আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ওই চার কর্মকর্তা বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সাবেক উপচার্য ড. আবদুল জলিল মিয়া ক্ষমতার অপব্যবহার ও ইউজিসি’র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিধি বহির্ভূতভাবে নিজ মেয়ে, ভাই ও ভাতিজাসহ আত্মীয় স্বজন এবং অনেককে চাকরি দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার মামলার চার্জশিট আমলে নিয়ে মামলাটি বিচারের জন্য বিশেষ জজ আদালতে পাঠানোসহ আসামিদের জামিন শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জলিল মিয়া ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার শাজাহান আলী মণ্ডলের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই মামলার বাকি তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি করেন।
তবে একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু দুর্নীতির মামলায় একজনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ ওই কর্মকর্তাসহ বাকি তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আইনের প্রতি সম্মান দেখানো। তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইব্রাহীম কবীর জাগো নিউজকে জানান, দুর্নীতি মামলায় সাবেক উপাচার্য এবং এক কর্মকর্তাকে কারাগারে প্রেরণসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি।তবে সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজপত্র হাতে না পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ারা জারির পর ছুটির আবেদন ওই তিন কর্মকর্তা। তবে তাদের ছুটির আবেদন মঞ্জুর হয়নি বলে জানান তিনি।
রংপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) এবিএম জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনো হাতে পাইনি। হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জেনেছি। তবে লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।