ভারতের সামনে আরেকটি বিশ্বজয়ের সুযোগ

ভারতের সামনে আরেকটি বিশ্বজয়ের সুযোগ

২০১১ বিশ্বকাপে মহেন্দ্র সিং ধোনি, শচীন টেন্ডুলকার আর বিরেন্দর শেবাগরা যেভাবে বিশ্বজয় করেছিল, ১৯৮৩ বিশ্বকাপে যেমন পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল কপিল দেবের ভারত, আজ তেমনি আরেকটি বিশ্বজয়ের সুযোগ ভারতীয়দের সামনে। এবার অবশ্য মঞ্চে নারী ক্রিকেটাররা। নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত। শেষ এই ধাপটি জিততে পারলেই বিশ্বজয়ের আনন্দে আবারও নেচে উঠবে পুরো ভারত।

ভারতীয় দলের এখন সবচেয়ে বড় প্রেরণা হারমনপ্রীত কাউর। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য ১৭১ রানের ইনিংসটাই এখন এতবড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে ভারতীয়দের। ১৯৮৩ সালের কপিলদেবের সঙ্গেও তুলনা চলছে তার। কপিলের ১৭৫ রানের সেই ইনিংসটাই ভারতের বিশ্বকাপ স্বপ্ন উস্কে দিয়েছিল। হারমনপ্রীত কাউরের অবিশ্বাস্য ১৭১’ও তেমন। ভারতীয়দের প্রত্যাশা, ফাইনালে সেটা মিলবে তো? ১৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার দীন্তি শর্মা। ওপেনার পুনম রাউত। বাঁ-হাতি রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়। একেরপর এক উজ্জ্বল অনেক নাম।

নতুন মুখেদের ভিড়ে মিতালির মতো আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও কম সফল নন। পশ্চিমবঙ্গের ঝুলন গোস্বামী। আট ম্যাচে সাতটা উইকেট পেয়েছেন তিনি। ফাইনালে ৩৫ বছরের ঝুলনের কাছে আগ্নি স্পেল চায় তার দল।

আজ লর্ডসের এই ফাইনাল যেন মেয়েদের ভারতকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ১৯৮৩ সালে। কপিল দেবের দল যে বছর বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাসে নাম লিখেছিল। মিতালি রাজরাও যেন সেই একই মোহনায় দাঁড়িয়ে। ইংল্যান্ডকে আজ হারাতে পারলে ইতিহাসে পৌঁছে যাবেন তারা। যতই নারীদের ক্রিকেট হোক, আজ লর্ডস ভর্তি থাকবে ভারতীয় এবং ইংলিশ সমর্থকে।

গতবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে পা দেওয়া ভারত ২৪ ঘণ্টা আগে অতীত বা ভবিষ্যৎ, কোনোটা নিয়েই ভাবতে রাজি ছিল না। বরং ১২ বছর আগের ভুল আর করতে চাইছেন না তারা। মিতালির কথাতেই সেটা পরিষ্কার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি পরিস্কার বলে দিয়েছেন, ‘২০০৫ সালের সঙ্গে এটাকে মেলানো যাবে না। আমরা অনেক বেশি ফোকাসড। অনেক বেশি তৈরি। অনেক বেশি সতর্কও।’

রোববার লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফাইনাল লড়াইয়ে নামার আগে ভারতের চিন্তা বাড়াচ্ছেন ইংল্যান্ডের তিন ক্রিকেটার। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সারা টেলর। যিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরি করে ফাইনালে। মারকুটে ডানহাতি ব্যাটসম্যান নাতালি স্কিভার। বিশ্বকাপে একমাত্র যার রয়েছে দুটো সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবং বাঁ-হাতি স্পিনার অ্যালেক্স হার্টলে। টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত আট উইকেট তার ঝুলিতে।

ভারতীয় দল অবশ্য ইংল্যান্ডের সারা, নাতালি বা আলেক্সদের নিয়ে আলাদা করে ভাবছে না। বরং দল হিসেবেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরিকল্পনা সাজিয়ে রাখছে। ফাইনালে মাঠে নামার আগে মিতালি বলেছেন, ‘আমার আর ঝুলনের কাছে এটা স্পেশাল বিশ্বকাপ। ২০০৫ সালের পর আবার ফাইনালে। আমাদের টিমমেটরা আবার আমাদের ফাইনালে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে ফাইনালটা সহজ হবে না। এমনকি ইংল্যান্ডের কাছেও ম্যাচটা সহজ হবে না।’

চাপ ভারতের উপর যত না, তার চেয়ে অনেক বেশি আয়োজক ইংল্যান্ডের ওপর। যা মেনে নিয়ে ইংলিশ অধিনায়ক হিদার নাইট বলেছেন, ‘পুরো টুর্নামেন্টে আমরা যেভাবে পারফর্ম করেছি, সেটাই করে দেখানোর চেষ্টা করব আরো একবার; কিন্তু ফাইনালের চাপ থাকবেই আমাদের উপর। ওদের উপরেও।’

উপচে পড়া লর্ডস যে হিদারদের আলাদা করে তাতিয়ে দেবে, তাও বলতে ভোলেননি তিনি। ইংল্যান্ড অধিনায়কের কথায়, ‘এটা স্পেশাল মুহূর্ত হতে চলেছে আমাদের কাছে। অনেক দিন পর লর্ডসে কোনও বিশ্বকাপের ফাইনাল হতে চলেছে। যে কারণে সবাই আমাদের ম্যাচ দেখার জন্য মুখিয়ে। নিজেদের সেরাটা দিতে চাই।’

এরই মধ্যে আবার ভারতীয় বোর্ড থেকে পুরস্কার ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে মিতালিদের জন্য। ফাইনালে হারলেও খেলোয়াড়রা পাবেন ৫০ লক্ষ রুপি করে। কোচ-সাপোর্ট স্টাফরা পাবেন ২৫ লক্ষ করে। জিতলে তো ডাবল পুরস্কার আসবেই।

খেলাধূলা