দীর্ঘ ১৬ মাসেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার কূলকিনারা খুঁজে পায়নি মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। দেশব্যাপী বহুল আলোচিত ওই হত্যাকাণ্ডের ১৬ মাস পূর্ণ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার।
একাধিকবার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও দীর্ঘ এ সময়ে মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। মামলার তদন্তের নামে জিজ্ঞাসাবাদ আর ডিএনএ পরীক্ষার একই বৃত্তে ১৬ মাস যাবৎ ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত কার্যক্রম। দীর্ঘ এ সময়ে মামলার তদন্ত কার্যক্রম কতটুকু এগিয়েছে? এ বিষয়ে মিডিয়ায় মুখ খুলতে নারাজ সিআইডি। মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়া নিয়েও চরম হতাশা ও সংশয়ে রয়েছেন তনুর পরিবার।
বুধবার বিকেলে তনুর মা আনোয়ারা বেগম সেল ফোনে জাগো নিউজকে জানান, আগে সিআইডি মাঝেমধ্যে খোঁজ-খবর নিত, এখন আর আমাদের খবর কেউ নেয় না। কার কাছে গেলে বিচার পাব তাও জানি না।
তনুর মা আরও বলেন, মেয়ের শোকে তনুর বাবা স্ট্রোক করে এখন কোনো মতে বেঁচে আছেন, হয়তো মেয়ে হত্যার বিচার না দেখেই তাকে মরতে হবে।
জানা যায়, গত বছরের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাসায় ফিরেনি কলেজ ছাত্রী তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে বাসার অদূরে সেনাবিনাসের ভেতর একটি নির্জন জঙ্গলে তনুর নিথর দেহের সন্ধান পায়।
পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবি’র পর গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমেকের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ না করে প্রতিবেদন দেয়ায় ঘটনার রহস্য উৎঘাটন নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় দেখা দেয়।
শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রানু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল এমন তথ্যও তারা নিশ্চিত হয়েছিল।
পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ মেচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা কিংবা ফলাফল কি? এ নিয়েও সিআইডি মুখ খুলছে না। তাই দীর্ঘ ১৬ মাসেও তনু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে না পারা, সামরিক-বেসামরিক অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা, এমনকি ডিএনএ পরীক্ষায় ৩ ধর্ষণকারীর শুক্রানু পেলেও এ পর্যন্ত ডিএনএ ম্যাচ করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় মেয়ে হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবারসহ সচেতন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এসব বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ জানান, আমরা বসে নেই; তদন্ত কাজ শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এরই মধ্যে মামলার কিছু অগ্রগতিও আছে। এর বেশি কিছু তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।