যত রকম হিসেব নিকেশ আছে তার সব ভারতের পক্ষে। আজকের ফাইনালে তাই ভারত একচেটিয়া ফেভারিট। ক্রিকেট পণ্ডিত, বিশ্লেষক ও সাবেক তারকা ক্রিকেটারদের বড় অংশ ভারতের পক্ষে। আর তা হাবারই কথা। দুই দলের একাদশের তুলনা করলে ভারতের শক্তির অনুপাত যদি ১০ হয় পাকিস্তানের অনুপাত ৫।
এক বিরাট কোহলিই দুই দলের পার্থক্যের বিরাট প্রাচীর। যার পরিপাটি ব্যাটিং টেকনিক, টেম্পারামেন্ট এবং যে কোন পরিবেশ-পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষমতা অসাধারণ (১৮৩ ম্যাচে ৮০০৮ রান, সেঞ্চুরি ২৭ টি)। কোহলির মানের না হলেও রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানরাও কার্যকর উইলোবাজ। দলকে শক্ত ভীত গড়ে দেয়ার কাজটি তারা খুব ভালোভাবেই করতে পারেন। আবার প্রয়োজনে লম্বা ইনিংসও খেলার সামর্থ্য আছে পর্যাপ্ত।
এরপরে যুবরাজ আর ধোনি- এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের সন্দেহাতিতভাবেই অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত মিডল অর্ডার। অনুকূল-প্রতিকূল দুই পরিস্থিতে তাদের ব্যাট সমান ধারালো। ফিনিশার হিসেবে দুইজনেরই জুড়ি মেলা ভার। গত সাত-আট বছরে এই দুইজনের হাত ধরে ভারত বহু কঠিন ম্যাচ জিতেছে। এদের সঙ্গে জাদেজা তো আছেই। ডেথ ওভারে উইকেটে গিয়ে হাত খুলে মারতে পারেন জাদেজা। সঙ্গে নতুন সেনসেশন হার্দিক পান্ডিয়া। হালকা গড়নের এই তরুণ রিয়াল `বিগ হিটার`। পেস-স্পিন দুই বোলিংয়ের বিরুদ্ধেই অবলীলায় বিগ শট হাঁকাতে পারেন।
এই হল ভারতের ব্যাটিং। ছোট্ট করে বললে ওয়ানডে ক্রিকেটের লাগশই ব্যাটিং লাইন আপ। শুরুতে তিনজন তুখোড় ব্যাটসম্যান। তার পর মিডল ও লেট অর্ডারে অন্তত আরও চারজন অতি কার্যকর পারফর্মার, সব মিলে লম্বা ব্যাটিং লাইন আপ। গভীরতাও প্রচুর।
এবার আসা যাক বোলিং প্রসঙ্গে। ভারতীয়রা জোড়ে বল করতে পারে না, মিডিয়াম পেস বা ফাস্ট মিডিয়াম বোলারে ছড়াছড়ি। এই অপবাদ এখন আর দেওয়ার সুযোগ নেই। উমেশ যাদব একাই একশো। ১৪৫ কিমিতে বল করার ক্ষমতা আশে এই পেসারে। সঙ্গে সুইং বোলার ভুবনেশ্বর। মরা উইকেটেও বল মুভ করাতে পারেন। অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশনের জাস্প্রিত বুমরাও কিন্তু খুবই কার্যকর। ডেথ ওভারে রানের গতি কমানো ও ব্রেক থ্রো আনার কাজটি ভালোই পারেন।
এরপর ভারতের চিরায়িত স্পিন বোলিং। বলার অপেক্ষা রাখে না এই মুহূর্তে ডানহাতি অপ স্পিনার অশ্বিন ও বাঁহাতি জাদেজা নিজ নিজ ক্যাটাগরিতে বিশ্বসেরা।
এবার তাকান পাকিস্তানের লাইন আপের দিকে। ভারতের উদ্বোধনী জুটির মত অমন পরীক্ষিত অভিজ্ঞ ও পরিণত একজন ওপেনার নেই। আজাহার আলী (৪৯ ম্যাচে ১৭৭৪ রান, সেঞ্চুরি ৩টি) আর এই আসরে শুরু করা ফকর জামান। এরপর বারব আজম, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ হাফিজ এবং সরফরাজ আহমেদ। ব্যাটিং টেকনিক ও সামর্থ্যের প্রায়গিক ক্ষমতা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এর কোনটাই ভারতীয়দের ধারের কাছে নাই।
তবে পাকিস্তানের একটা বিভাগ আছে। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যতরকম ব্যাখ্যা দেওয়া হক না কেন, হিসাব পাল্টে দেবার বোলিং আছে পাকিস্তানের। একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুণ। ভারতের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে করুণ ভাবে হারার পর পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মূলত বোলাদের হাত ধরে।
নদী শুকিয়ে গেলেও নাকি দাগ থেকে যায়। জুনায়েদ খান, মোহাম্মদ আমির ও হাসান আলীরা সেই কথায় যে মনে করিয়ে দিচ্ছে। শতভাগ ব্যাটিং উপযোগী পরিবেশেও কি অসাধারণ ফাস্ট বোলিংয়ের অনুপম নিদর্শন রেখেছন এই তিন তরুণ। মূলত তাদের বোলিংয়ের উপর পুঁজি করেই প্রতিপক্ষকে আঘাত হানছে পাকিস্তানিরা। প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকা (২১৯), শ্রীলঙ্কা (২৩৬) ও ইংল্যান্ডকে (২১১) রানে অল আউট করে। এই ধারালো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়া কোন দল আড়াইশ করতে পারেনি।
এখন ফাইনালে যদি ভারতের ব্যাটিং দুর্গে এই তিন তরুণ আঘাত হানতে পারেন, কোহলির দলকে যদি ২৫০`র কমে বেধে রাখতে পারেন তবে পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা থাকবে। কারণ অনভিজ্ঞ ও অপরিণত বেশি বলে খুব বড় স্কোর তাড়া করায় সামর্থ্য কম এই দলটির। তবে ২৩০/২৪০ অনায়াসে করে ফেলার সামর্থ্য আছে।