বিশিষ্ট কূটনীতিক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক আহমদ চৌধুরী আর নেই। বুধবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
স্কয়ার হাসপাতালের একটি সূত্র জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী কূটনীতিক ফারুক আহমদ চৌধুরী। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভাষা ও আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নির্ধারণে তার রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। তিনি দেখেছেন ভারতবর্ষ থেকে পাকিস্তানের জন্ম, এর বিলয় এবং নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান।
ফারুক চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১৪ জানুয়ারি সিলেট জেলার করিমগঞ্জে। ফারুক চৌধুরীর শৈশব কেটেছে পিতা গিয়াসুদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৃহত্তর সিলেটে ও ভারতের বর্তমান মেঘালয় ও আসামরাজ্যে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৫ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে তিনি ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগদান করেন।
ফারুক আহমদ চৌধুরী ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন। ১৯৭৬ সালে আবুধাবিতে, ১৯৭৮ সালে বেলজিয়ামে, পরবর্তীতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওআইসির চতুর্দশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলন এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের সমন্বয়ক ছাড়াও তিনি জাতিসংঘ এবং অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থায় দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
ফারুক আহমদ চৌধুরী ১৯৮৪ সালে পররাষ্ট্র সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
সাহিত্যের প্রতি ছোটকাল থেকেই ঝোঁক ছিল ফারুক চৌধুরীর। তার প্রকাশিত আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘জীবনের বালুকাবেলায়’ বইটি শুধু কূটনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ দলিল নয়, বাংলা গদ্যসাহিত্যেরও অনন্য সংযোজন। এই বইয়ের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, এছাড়া আইএফআইসি পুরস্কারও প্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক এই গ্রন্থ ছাড়াও প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে—দেশ দেশান্তর, প্রিয় ফারজানা, নানাক্ষণ নানাকথা, স্বদেশ স্বকাল স্বজন, সময়ের আবর্তে ইত্যাদি।