ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, ‘রাজধানীতে বিলবোর্ড ও ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণে অনেক মাস্তান ছিল, তাদের তাড়িয়ে দিয়েছি। যাদের কারণে আমাদের বিলবোর্ডে হাত দেয়া যেত না। ঢাকার সড়কে ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানোর কারণে অনেক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। এ পর্যন্ত ২০ হাজার বিলবোর্ড ও ১ লাখ ৭৫ হাজার ব্যানার ও পেস্টুন অপসারণ করেছি।’
সোমবার সকালে ‘ঢাকা উত্তর সিটি, প্রচেষ্টার ২ বছর’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় আনিসুল হক এসব কথা বলেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ডিএনসিসি।
মেয়র বলেন, ‘আমরা দু’বছরে অনেক কাজ করেছি তা না, তবে একটা পরিকল্পনায় পৌঁছেছি। এই দু’বছরে আমি আমার পরিবার (ডিএনসিসি) চিনেছি। কাউন্সিলর কর্মকর্তাদের চিনেছি। ঢাকা শহর একটি ভিন্ন ধরনের শহর। বলা হয়, ঢাকা শহর পৃথিবীর খারাপ শহরগুলোর মধ্যে প্রথম। নিচের দিক থেকে প্রথম। ঢাকা নাকি বাসযোগ্য নয়। মেয়র হিসেবে আমি এতে একমত হতে পারি না।’
বিশ্বের বিভিন্ন শহরের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহর আসলে কত বড়? সিঙ্গাপুরের আয়তন ৭১৮ স্কয়ার ফুট, টোকিওর আয়তন ২ হাজার ১৮৮ কিলোমিটার। যেখানে বাস করছেন ১ কোটি ২২ হাজার মানুষ। ক্যানবোলার আয়তন ৮১৪ স্কয়ার কিলোমিটার। বাস করছেন ৩ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ। মস্কোর আয়তন ২ হাজার ১৮৩ কিলোমিটার। লোক সংখ্যা ১ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার। সেখানে ঢাকার আয়তন মাত্র ৮৩ কিলোমিটার। এতে বাস করেন ৯০ লাখ মানুষ।’
আনিসুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৫৪টি স্থায়ী স্থাপনা, ৪৫০টি স্থায়ী অবকাঠামো, ২ হাজার ৭৬৭ অস্থায়ী অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হয়েছে। জমি, ফুটপাত ও ভূমির উদ্ধার করা হয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার বর্গফুট। আমরা বুঝে না বুঝেই কিছু সাহসী কাজ করে ফেলেছি। ১০টি স্থানে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করেছি। বিভিন্ন দূতাবাসের দখলে থাকা ফুটপাত উদ্ধার করছি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সমিতি আমাদের জন্য অসাধারণ কাজ করছে। কোনো কোনো স্থানে আমরা যা না করেছি তারা তার চেয়ে বেশি করেছে। ডিএনসিসি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, ঢাকা শহরে বিলবোর্ড মাস্তানদের দৌরাত্বে হাত দেয়া যেত না। সেই ঢাকাকে আমরা পরিষ্কার করেছি। ২০ হাজার বিলবোর্ডে পরিষ্কার করেছি। ১ লাখ ৭৫ হাজার অবৈধ ব্যানার ও পেস্টুন ফেলে দিয়েছি। রাজনৈতিক নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়ে হাত ধরে বলেছি। এখন অনেক কমে গেছে।
মেয়র আরও বলেন, আমরা ৫০টির মতো এসটিএস নির্মাণ করেছি। যাতে বড় ময়লাগুলো এখান থেকে ল্যান্ড ফিলে নিয়ে যায়। কয়েকটি ওয়ার্ডে বেসরকারিভাবে দেয়া হয়েছে। তারা পরিষ্কার করছে। ভেহিক্যাল ট্র্যাকিং সিসেন্টম চালু করেছি। ফলে একটি যানবাহন সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে গেলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সে সিন্টেম করে দিয়েছি। প্রশাসনিকভাবে শৃঙ্খলা ফিরে এনেছি।
ফুটপাত বেদখল বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, এ দেশে গবির হকারদের পাশাপাশি বড়লোক হকারও আছেন। যারা বছরের পর বছর জনগণের জায়গা দখল করে রেখেছিলেন। আমরা অনেক জমি ও ফুটপাত উদ্ধার করেছি। আমরা ফাইভ স্টার হোটেলের মতো ১২টি বাথরুম তৈরি করেছি।
ডিএনসিসির ‘নগর অ্যাপ’ প্রসঙ্গে আনিসুল হক বলেন, আমরা একটি নগর অ্যাপ করেছি। এখানে সব কিছু রয়েছে। আপনি চাইলে কোথায় কী আছে তা সহজেই জানতে পারবেন। এর সঙ্গে পুলিশের একটা সংযোগ থাকবে। চাইলে ওয়াইফ এর মাধ্যমে আপনাকে ট্রাক করতে পারবেন।
আনিসুল হক বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ১১টি ইউলোপ স্থাপন ও নতুন আরও এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০০ রাস্তার উন্নয়ন কাজ করা হবে। এ ছাড়া রাস্তায় ৪ হাজার আধুনিক বাস নামানো হবে।
ঢাকায় ২৬৪টি ভেজাল বিরোধী অভিযানে ৭৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায়সহ এক হাজার সিসি টিভি লাগানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।