গত ১০ বছরে মাত্র ৩০০ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন নিয়েছে জাপান। সম্প্রতি বিদেশি কর্মী নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন আইন করায় এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশটিতে শ্রমবাজার খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ সরকার।
বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহৎ শ্রমবাজারগুলো বন্ধ থাকা এবং বাকিগুলোতে শ্রমিক যাওয়ার হার কমে আসায় নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু হয় জাপানের বাজার নিয়ে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি দেশটি সফর করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। পাঁচ দিনের সফর শেষে তাকে ‘ভগ্ন মনোরথ’ নিয়েই ফিরতে হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশ যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের বেশির ভাগই অদক্ষ। জাপানে এ ধরনের কর্মীর কোনো দরকার নেই। তবে বছরে যে অল্প সংখ্যক টেকনিক্যাল ইন্টার্ন দেশটি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে থাকে, সেই সংখ্যা কিছুটা বাড়াবে দেশটি। তবে এখানেও আশার কিছু নেই। সেই সংখ্যা খুবই সামান্য।
নির্মাণ ও উৎপাদনমুখী শিল্পের জন্য শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন (কারিগরি প্রশিক্ষণার্থী) নেয় জাপান। সম্প্রতি ইন্টার্নদের প্রশিক্ষণের মেয়াদ তিন বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে দেশটির সরকার।
এ ব্যবস্থার অধীনে জাপানে বর্তমানে এক লাখ ৯০ হাজার বিদেশি কর্মরত রয়েছেন। নতুন আইন অনুযায়ী তারা পাঁচ বছর পর্যন্ত জাপানে থাকতে পারবেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত ১০ বছরে মাত্র ৩০০ বাংলাদেশিকে ইন্টার্ন হিসেবে নিয়েছে জাপান। এ সংখ্যা কিছুটা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াবে দেশটি।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জাবেদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাপানের বাজার আমাদের (বাংলাদেশের) জন্য অনুকূলে নয়। এটা একেবারে বদ্ধ দুয়ার নয়, আবার সেই অর্থে উন্মুক্তও নয়। বাজারটি নিয়ে খুব বড় স্বপ্ন দেখছে না বাংলাদেশ।’
japan
‘তবে আগের মতো সেখানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পাঠানো যাবে। তবে যে ধরনের শ্রমিক আমরা সাধারণত পাঠাই, সে ধরনের শ্রমিক জাপানের প্রয়োজন নেই’ বলেন তিনি।
জানা যায়, বিদেশি কর্মী বাড়ানোর জন্য জাপান সম্প্রতি একটি নীতি গ্রহণ করলেও সে আইনের আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ থাকছে না। এক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীদের জন্য সামান্য সুযোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন দেশটি সফর করে আসা সরকারের কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন, জাপান (আইএম জাপান) বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য দেশটির সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। কিভাবে বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার আগে কর্মীদের দক্ষ করে তুলছে সে বিষয়ে তারা দেশটির সরকারকে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, আইএম জাপান দেশটির বিভিন্ন নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী সংগ্রহ করে। সংস্থাটির সঙ্গে সম্প্রতি একটি চুক্তিও করেছে বাংলাদেশ। গত ২০ এপ্রিল টোকিওতে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে একটি সম্মেলনে অংশ নেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। সেখানে নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণ করে। সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে মন্ত্রী বাংলাদেশের কর্মীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘আইএম জাপানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বাংলাদেশি কর্মীদের বিষয়ে তার ধারণা অত্যন্ত ইতিবাচক। আমরা চেষ্টা করব এ ধারণা ব্যবহার করে টেকনিক্যাল ইন্টার্নের বাইরে আরও কিছু কর্মী পাঠানো যায় কিনা। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে কোয়ালিটি স্টুডেন্ট গিয়ে সেখানে স্থায়ী হওয়াও সমর্থন করে দেশটি।’
এছাড়া ২০২০ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসের আসর উপলক্ষে অল্প সংখ্যক নির্মাণ শ্রমিকের যাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের অপর এক কর্মকর্তা।