৭ মে ১৯৭১ সাল। ৪৬ বছর আগে এই দিনে দেশীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনী মির্জাপুরে নারকীয় গণহত্যা চালায়। তারা এশিয়া খ্যাত কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ ৩৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্বিচারে হত্যা করে। অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয় সংখালঘুদের ঘরবাড়ি।
সেদিন ছিল শুক্রবার। সদরে ছিল হাটবার। দুপুরের পর হঠাৎ দুই প্লাটুন পাকিস্তানি সেনা মির্জাপুরে প্রবেশ করে। পাকিস্তানি সেনা দেখে হাটের মানুষ দিকবিদিক ছুটাছুটি করে পালাতে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে হাট জনশূন্য হয়ে পড়ে।
হানাররা স্থানীয় রাজাকার মওলানা ওয়াদুদ, তার দুই ছেলে মান্নান ও মাহাবুব হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার মির্জাপুর গ্রামে। মির্জাপুর এবং আন্ধরা গ্রামে নির্বিচারে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে নিরীহ মানুষদের হত্যা করে। ওইদিন পাকিস্তানিদের হামলায় অন্তত ৩১ জন নিরীহ গ্রামবাসী প্রাণ হারায়।
পাক বাহিনী সেদিন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। ওইদিনই তারা এশিয়াখ্যাত কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবি ও কুমুদিনী কল্যান সংস্থার দুই কর্মচারীকে নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে য়ায়। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি।
পোষ্টকামুরী গ্রামের বাসিন্দা মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেনের বাবা এবং মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলমের দাদা জয়নাল সরকারকে পাকিস্তানিরা ঘরের ভেতর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে।
পাকিস্তানিরা ওই দিনই নিজ বাসায় আওয়ামী লীগের অফিস থাকার অপরাধে এবং লুটতরাজে অংশ নেয়া এদেশীয় রাজাকারদের কাজে বাধা দেয়ায় একই গ্রামের অকুতভয় সৈনিক মাজম আলী শিকদারকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
পাকবাহিনী তাকে ধরে নিয়ে যতবারই পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে বলেছে সে ততবারই বলেছে জয় বাংলা। এভাবে তিনবার বলার পর মির্জাপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় কুমুদিনী হাসপাতালের প্রাচীরের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এদিকে ৭ মে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এবং তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবির অপহরণ দিবস উপলক্ষে মির্জাপুর গ্রামবাসী সপ্তাহব্যাপী নাম কীর্তন শুরু করেছে।